জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে যদি ফেসবুকের একাউন্ট খুলতে হয়, কিছু অপরাধজনিত ঘটনায় কিছু সুবিধা প্রশাসন পাবে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু অন্যরকম ক্ষতিও হতে পারে।
যেসব সুবিধা পাওয়া যাবেঃ
১। অপরাধীরা ফেইক একাউন্ট ব্যবহার করতে পারবে না।
২। ফেসবুক দিয়ে মানুষ প্রতারণা করার হার কমে যাবে।
৩। অনলাইন ইভ-টিজিং এর মত ঘটনাগুলো কমে যাবে।
৪। সন্ত্রাস বা ত্রাস ঘটানোর জন্য ফেসবুকের ব্যবহার কমে যাবে।
কিন্তু কিছু বড় বড় সমস্যায় পড়ে যেতে পারে সবাই, যেগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় আঘাত হানতে পারে - যেমন
১। বাংলাদেশের অগণিত মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় আইডির তথ্য এবং নাম্বার ফেসবুকের কাছে চলে যাবে। ফেসবুকের এই ডাটাগুলো কিন্তু ফেসবুকই মালিক। অর্থাৎ এই তথ্যগুলোকে ফেসবুক যেভাবে চাইতে সেভাবেই ব্যবহার করতে পারবে। যেমন ধরেন, তারা চাইলেই তথ্য গুলো যে কারো কাছে দিতে পারবে। ফেসবুকের কাছে সংরক্ষিত এই তথ্যগুলোর মালিক কিন্তু বাংলাদেশি সরকার হবে না। হবে ফেসবুক। আর এমন কোন পদ্ধতি অন্তত এখন পর্যন্ত ফেসবুক নেয়নি যেখানে প্রতি দেশের তথ্য রাখার জন্য ঐ দেশেই একটি সার্ভার থাকবে আর যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সে দেশের সরকারের হাতে। এধরনের কিছু মনে হয় না ফেসবুক কোনদিন করবে। আর এভাবেই বিদেশী রাষ্ট্রের হাতে চলে যাবে দেশের কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য যা যে কোন ধরনের কাজে তারা লাগাতে পারবে।
২। ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ফেসবুক নানা ধরনের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করতে পারবে বিশেষ করে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে। আর কামিয়ে নিয়তে পারবে কোটি কোটি ডলার মুনাফা আর সেই মুনাফা ভোগ করবে শুধু মাত্র ফেসবুক।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিলে ফেসবুক এমনিতেই খুশী হবে। বরং এই কথা দিয়ে ফেসবুকের সাথে অনেক ডিল করা যাবে। কারণ তারা চায় বিশাল একটি তথ্যভাণ্ডার আর জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যের উপর আর কিছু নেই। ফেসবুকের জন্য একটি একটি বড় প্লাস পয়েন্ট হলেও দেশের জন্য বা মানুষের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না যদি সে তথ্যভাণ্ডারের এক্সেস, মালিক এবং সার্ভার বাংলাদেশে না হয়।
কোটি কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে সবাই তো আর অপরাধী না বা সন্ত্রাসী কাজে ফেসবুক ব্যবহার করে না। সামান্য কিছু মানুষ ফেসবুককে খারাপ কাজে ব্যবহার করে। বাকীরা সবাই এটিকে একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেই নিয়েছে। অনেকটা টাইম পাস অথবা মতামত দেয়াড় জায়গা। এছাড়া ফেসবুকের তেমন কোন বড় উপকারিতা নেই। এটি বিনোদনের একটি মাধ্যমই বলা যেতে পারে এখন।
সবচেয়ে ভাল হত যদি বাংলাদেশে ফেসবুকের বিকল্প কিছু বানানো যেত যেটি অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় প্রেক্ষাপটে ফেসবুককেও ছাড়িয়ে যেত। তাহলে আপনা-আপনি ফেসবুকের অপব্যবহার কমে যেত।
মার্ক জুকারবার্গ ইন্টারনেট ডট অর্গ দিয়ে পুরো পৃথিবীর সাইবার স্পেস দখল করে নিতে চেয়েছিল। যে কারণে সবজায়গায় ফ্রি ফেসবুক বলে ক্যমপেইন চালিয়ে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু আদপে সেটি ছিল মনোপলি ব্যবসার শুরু আর অন্যান্য প্লাটফর্ম বা ওয়েবসাইটগুলোর শেষ হবার উপায়। কেননা, বিজ্ঞাপন হল ফেসবুকের একমাত্র চালিকা শক্তি আর সেই বিজ্ঞাপনের জন্য নেটওয়ার্ক যত বড় করা যায় আর যত বেশী মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় ততই ফেসবুকের লাভ আর সেই সাথে যদি তাদের কাছে থাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের মত গুরুত্ব পূর্ন তথ্য তাহলে তো কথাই নেই। টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের বিশাল একটা বাজার খুলে যাবে ফেসবুকের জন্য আর মুনাফা গন্না হবে বিলিয়ন ডলারে। তাই প্রথম দিকে ইন্টারনেট অর্গ নিয়ে মানুষের মাতামাতি থাকলেও পরে সবাই ঠিকই বুঝতে পেরেছিল।
ফেসবুককে খুব রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়ে যাচ্ছে - অন্তত ফ্রি তে মার্কেটিং হচ্ছে তাদের। এটাই তাদের চাই। অথচ এটা এমন কোন কিছু না। Its just a Website. Nothing more than that.
0 coment rios:
আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।