Monday 1 February 2016

অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাকাত ব্যবস্থাপনার সুফল

অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাকাত ব্যবস্থাপনার সুফল

পোস্ট: সম্পাদকতারিখ: জানুয়ারী ২৯, ২০১৬বিভাগ: অর্থনীতি/ব্যবসা-বাণিজ্য১টি মন্তব্য প্রিন্ট ই-মেইল
0  0  0  

মানব সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য সংরক্ষণে যাকাত ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম সম্পদের লাগামহীন সঞ্চয়কে নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে সমাজকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আবার হালাল হারামের শর্ত, বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে এক সুবিচার ও ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি উপহার দিয়েছে।[1] ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংযত পদ্ধতি এ নির্দেশ প্রদান করে যে, ধন-সম্পদ জমা ও সঞ্চয় করার জন্য নয়, বরং একে বণ্টন করতে হবে এবং (এক হাত থেকে অপর হাতে) চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে করে মানুষের মধ্যে সম্পদের ভারসাম্য অক্ষুন্ন থাকবে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন হলো ‘যাকাতের বিধান’। এ জন্য যাকাত প্রদান ফরয করা হয়েছে। ইসলাম সীমিত পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানাকে স্বীকার করে নিলেও এ সুযোগে যাতে অশুভ পুঁজিতন্ত্রের সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। ইসলাম মনে করে, নিত্য দিনের প্রয়োজন পূরণ করার পর এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেওয়ার পর যদি কারো নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৯৫ গ্রাম) পরিমাণ রূপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের সম্পদ এক বৎসর কাল পর্যন্ত সঞ্চিত থাকে তাহলে সে ব্যক্তি সম্পদশালী। এ ধরনের সম্পদশালী ব্যক্তিদের থেকে রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য অভাবী মানুষের প্রয়োজন এবং সামাজিক প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ঐ সঞ্চিত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ রাষ্ট্রীয় বায়তুল মালে জমা করার দাবী জানায়। এর এ দাবী ঐচ্ছিক পর্যায়ের নয়; বরং এ দাবী আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক এবং ধর্মীয়ভাবে অবশ্যই পালনীয় ফরযরূপে অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি তা আদায় না করে তার জন্য আইনগতভাবে শাস্তির সাথে সাথে পরকালীন কঠিন আযাবের ব্যাপারেও সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ يَوۡمَ يُحۡمَىٰ عَلَيۡهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوبُهُمۡ وَظُهُورُهُمۡۖ هَٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمۡ تَكۡنِزُونَ ٣٥﴾ [التوبة: ٣٤، ٣٥]

‘‘আর যারা সোনা রূপা (অর্থ-সম্পদ) জমা করে রাখে এবং সেগুলো আল্লাহর পথে যাকাত হিসেবে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। কিয়ামতের দিন সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং সেগুলো দ্বারা তাদের মুখমণ্ডল, পার্শ্বদেশ এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। আর বলা হবে এগুলোই সেই সম্পদ যা তোমরা (যাকাত না দিয়ে) পুঞ্জিভূত করে রেখেছিলে।’’ [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৪-৩৫]

২. যাকাতের সংজ্ঞা, পরিমাণ ও শর‘ঈ বিধান:

যাকাত আরবী শব্দ, আভিধানিক অর্থ হলো ‘পরিশুদ্ধকরণ’। ইসলামী দৃষ্টিকোণ হতে যাকাত সম্পদ পরিশুদ্ধ করার জন্যই ব্যবহৃত হয়। যেমন, আল-কুরআনে এসেছে,

﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ١٠٣﴾ [التوبة: ١٠٣]

‘‘তাদের সম্পদ থেকে যাকাত নিন যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’’ [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]

﴿وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [الاحزاب: ٣٣]

‘‘সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, আল্লাহ তো চান তোমাদের কলুষমুক্ত করে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন করতে।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]

শরী‘আতের দৃষ্টিতে ‘যাকাত’ প্রযোজ্য হয় ধন-সম্পদে আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও ফরযকৃত অংশ বোঝানোর জন্য।[2] ধন-সম্পদ থেকে এ নির্দিষ্ট অংশ বের করাকে ‘যাকাত’ বলা হয় এ জন্য যে, যে মাল থেকে তা নির্ধারণ করা হলো, যাকাতের কারণে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ব্যবহারিক অর্থে ‘‘যে কোনো প্রকারের বহন বা স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে (নিসাব) পৌঁছালে তার ওপর দেয় সম্পদকে যাকাত বলে।’’[3] অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যাকাত হলো, ‘‘বিত্তশালীদের উপর আরোপিত এক ধরনের সুনির্দিষ্ট কর।’’[4] বিত্তশালী বলতে যারা সম্পদের নিসাব (অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটা সময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক) তাদেরই বোঝায়। নিসাবের পরিমাণ হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা, ব্যবসায়ের পণ্য এবং বাড়ী-ঘরের এর পূর্ণ এক বৎসরের মালিকানায় থাকা। এক্ষেত্রে যাকাতের হার হলো মজুদ বা সঞ্চিত সম্পদের ১/৪০ অংশ বা ২.৫%।[5] ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। যাকাত একদিকে মানুষের ধন-সম্


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।