সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ৩৭
জোহরের আযান দিলে রিমা আর খালিদের ঘুম ভাঙে।খালিদ তারাতারি করে গোসল করে মসজিদে চলে যায়।তারপর রিমা গোসল করে নামাজ আদায় করে নেয়।
দুপুরের খাবার পর রিমা থেকে সবই বিস্তারিত সব কিছু বিস্তারিত বলে।সবাই আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে।
রিমাঃ আমি আপনাদের কাছে একটা আবদার করতে চাই।
খালিদের মাঃ কি মা....
রিমাঃ মা... আমি গতকাল রাত্রে ইশার পর দেখি রাসেদ ভাইয়ের স্ত্রী সবাইকে নিয়ে তালিম করে। আমার কাছে ব্যপারটি খুব ভালো লাগে।আমার ইচ্ছে আমরাও বাড়িতে ইশার পর কিছু তালিম করি। কি বলেন আপনারা..?
খালিদের মাঃ আবদার টা খারাপ না।ভালোই হবে।ঠিক আছে আজ থেকে তাহলে আমরাও শুরু করি।
খাদিজাঃ জী মা... ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ।
তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিলো আজ রাত থেকেই তারা নিয়মিত ইশার পর তালিম করবে।
.
ভালোই কাটছে তাদের দিন কাল।খুব সতর্কতার সাথে চলাফেরা করে রিমা। খাদিজা নিয়মিত রিমার দেখাশোনা করে।সংসারের কাজের পাশাপাশি টাইম মাফিক রিমার খাওয়া দাওয়া ওষুধ ইত্যাদি রিমাকে স্মরণ করিয়ে এবং মাঝে মাঝে নিজে খাইয়ে দেয়।
ভালোই কাটছে তাদের দিন কাল।খুব সতর্কতার সাথে চলাফেরা করে রিমা। খাদিজা নিয়মিত রিমার দেখাশোনা করে।সংসারের কাজের পাশাপাশি টাইম মাফিক রিমার খাওয়া দাওয়া ওষুধ ইত্যাদি রিমাকে স্মরণ করিয়ে এবং মাঝে মাঝে নিজে খাইয়ে দেয়।
গর্ভের সন্তানদের বয়স দশ মাসের কাছাকাছি
রিমা খালিদকে বিদায় দেওয়া পর রিমা খাদিজার সাথে রান্না ঘরে বসে বসে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে।হঠাৎ করে তলপেটে ব্যথা শুরু হলো। সাধারণত এই সময় ব্যথা হয়।আগেই অনেক বার হয়েছে।তাই রিমা সাধারণ ব্যথা বলে সহ্য করার চেষ্টা করে।কিন্তু ব্যথার তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।খাদিজাকে বলার পর খাদিজা ধরে কষ্ট করে রুমে নিয়ে যায়।তারপর খাটে শুয়ে দেয়।পরে খাদিজা তাদের শাশুড়ি কে ডেকে আনে।খাদিজা আর শাশুড়ি রিমার পাশে এসে বসে। প্রচন্ড ব্যথায় সহ্য করতে রিমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। রিমা খাদিজার হাত খুব শক্ত করে রাখে।চিৎকার করতে গিয়েও করছেনা।ব্যথা যখন তীব্র থেকে তীব্র হয় তখন অল্প অল্প আওয়াজে আল্লাহ কে বার বাবা ডাকে।রিমার শাশুড়ি রিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রিমার অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছে না দেখে উনি উঠে গিয়ে খালিদের বাবাকে তারাতারি ধাত্রীকে ডেকে আনতে বলে। কিছুক্ষণ পর খালিদের বাবা ধাত্রী কে নিয়ে আসে। ধাত্রী এসে কিছুক্ষণ রিমাকে পর্যবেক্ষণ করে।
ধাত্রী :ওর গর্ভে তো মনে হয় একটা নয় দুইটা সন্তান ।
খালিদের মাঃ ডাক্তার বলছিল তিনটা সন্তান।
ধাত্রী : জী...?
খাদিলের মাঃডাক্তার বলছিলো তিনটা।
ধাত্রী : তাহলে রোগীকে বাড়িতে ধরে রাখছেন কেন..?তারাতারি এম্বুলেন্স খবর দেন।হস্পিতাল নিয়ে যান।রিক্স নেওয়া উচিত হবে না। তারাতারি ব্যবস্থা করুন।
ধাত্রীর কথা শুনে খালিদের মা তারাতারি উঠে খালিদ কে ফোন দেয় এবং এম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করতে বলে।
খালিদ সাথে সাথে জানিয়ে দেয় কষ্ট করে হলেও বাড়িতে যেন ডেলিবারী হয় তার ব্যবস্থা করুন।হস্পিতাল নেওয়া মানে সন্তান ও মায়ের একধরনের নিরব মৃত্যু।
খালিদ সাথে সাথে জানিয়ে দেয় কষ্ট করে হলেও বাড়িতে যেন ডেলিবারী হয় তার ব্যবস্থা করুন।হস্পিতাল নেওয়া মানে সন্তান ও মায়ের একধরনের নিরব মৃত্যু।
খালিদের কথা শুনে খালিদের মা হতাশা মুখ নিয়ে জানিয়ে দেয়....
খালিদের মা:খালিদ বলছে কষ্ট করে হলেও বাড়িতে চেষ্টা করতে।হস্পিতাল নেওয়া নাকি নিরব মৃত্যু।
খালিদের মায়ের কথা শুনে ধাত্রী কি করবে বুজতেছেনা।আগে কখনো এই ধরনের মুখামুখি হয় নি।এখন পারবে কিনা টেনশনে আছে।
ধাত্রী :মা....মনে বল রাখো। ইনশাআল্লাহ আমরা ঘরেই চেষ্টা করবো।মনে বল রাখতে পারবি ও ইনশাআল্লাহ।
রিমাঃ ইনশাআল্লাহ পারবো।(বলতে অনেক কষ্ট হয়)
সাধারণত একজন মানুষ বিশ(২০) ইউনিট ব্যাথা সহ্য করতে পারে। কিন্তু রিমাকে এখন প্রায় ৫৭+ ইউনিট সহ্য করতে হচ্ছে।যা শরীরের একসাথে বিশ টা হাড় ভেঙে যাওয়ার সমান।প্রচন্ড ব্যথায় রিমা খাদিজার হাত শক্ত করে ধরে রাখে।খালিদা রিমাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছে।রিমা বার বার আল্লাহ কে স্মরণ করছে।ধাত্রী চাদর দ্বারা রিমার শরীর ঢেকে রেখে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান খুলে রাখে।
খালিদের মা রিমার রুম বের হয়ে ওযু করে নামাজের রুমে চলে যায়।সেখানে গিয়ে দোয়া দউদুরুদ পড়তে থাকে।খালিদ দোকান বন্ধ করে এসে সামনের রুমে বসে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে।
ধাত্রী চাদরের নিচ দিয়ে হাত ডুকিয়ে রিমার পেট মর্দন করে।
প্রচন্ড ব্যাথায় রিমা অজ্ঞান হয়ে যাবে যাবে অবস্থা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য চিৎকার করতে পারছে না।এক হাত দিয়ে বালিশ চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে খাদিজার হাত শক্ত করে ধরে রাখে। অনেকক্ষণ ব্যাথা সহ্য করতে করতে রিমা তার প্রথম বাচ্চা প্রসব করে।রিমা খাদিজা আর ধাত্রী সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।
ধাত্রী যাবতীয় সকল কার্যক্রম শেষ করে খালিদের মা কে ডাকে।উনি এসে প্রথম বাচ্চাকে কোলে নেয়।তারপর আবার ধাত্রী রিমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর আবার প্রসব বেদনা শুরু হয় এবং ২য় বাচ্চা প্রসব করে।তারা শুকরিয়া আদায় করে তারপর ধাত্রী যাবতীয় কার্যক্রম শেষকরে।তারপর ৩য় বাচ্চার প্রসব হয়।সবাই শুকরিয়া আদায় করে।
তারপর ধাত্রী রিমার অন্যান্য কাজ সমাধান করে।
খালিদ সামনের রুমে বসে বসে দোয়া দুরুদ নিয়ে ব্যস্ত।যখন মোটামুটি সব কাজ শেষ হয়।তখন খালিদ কে খবর দেওয়া হয় যে তার তিনটা কন্যা সন্তান হয়েছে।
খালিদঃআলহামদুলিল্লাহ্।
খালিদের মাঃ দেখবি....? আয়
খালিদঃ সব কাজ কি শেষ..?আমি কি এখন ঐ রুমে যেতে পারবো..?
খালিদের মাঃ আরে না... বাচ্চাদের তো আমি পাশের রুমে নিয়ে আসছি।খাদিজা আর ধাত্রী এখনো রিমাকে নিয়েই আছে।
তারপর খালিদ পাশের রুমে আসলো। যখন বাচ্চাদের প্রথম দেখলো তার এক অন্যরকম এক আনন্দ অনুভব করে।যখন প্রথম একটা কে কোলে নেয় তখন তার কাছে আরো বেশি আনন্দ লাগে। তার কাছে মনে হলো আল্লাহ মনে হয় তাকে দুনিয়ার সমস্ত সুখ দিয়ে দিছেন।আনন্দে তার চোখের পানি চলে আসে।
তারপর বাচ্চার কানের সামনে নিজের মুখে নিয়ে ডান কানে আযান এবং বাম কানে একামত দেয়।
এভাবে তিনটা বাচ্চাকেই কোলে নিয়ে খালিদ ডান কানে আযান এবং বাম কানে একামত দেয়।
তারপর খালিদ খেজুর চিবিয়ে রস বের করে তার সন্তানদের মুখের লালার সাথে মিশ্রিত করে আঙুল দিয়ে মুখের জিব্বাহ তে লাগিয়ে দেয়।
তারপর বাচ্চাদের রিমার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।এবং দুধ পান কারনো হয়।
আযান দিলে খালিদ মসজিদে চলে যায়।আসার সময় বাজার থেকে মিষ্টি নিয়ে আসে।দুপুরের খাবারের পর সবাই মিষ্টি মুখ করে।তারপর খালিদ ধাত্রীকে তার মায়ের মাধ্যমে উপযুক্ত হাদিয়া প্রদান করে এবং ধাত্রী কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে বিদায় নেয়।
খাদিজা রিমার জন্য হালকা নরম খাবার তৈরী করে নেয়।তারপর নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।খাওয়ার পর রিমা খাটে শুয়ে থাকে।
তিনটার দিকে খালিদ রুমে প্রবেশ করে।
খালিদঃ আসসালামু আলাইকুম।
রিমাঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। (উঠার চেষ্টা করে)
খালিদঃ আরে...আপনি শুয়ে থাকুন। উঠতে হবে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ
শিক্ষা
★হস্পিতালে সন্তান জন্মানো মানেই এক ধরনের নিরব মৃত্যু। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত বাড়িতে জন্মানো শিশুর থেকে হস্পিতালে জন্মানো শিশুর স্মৃতিশক্তি কম হয়।তাছাড়া দুর্বলও বেশি হয়।তাছাড়া হস্পিতালে অনেক অনেক শরীয়াহ পরিপন্থী কাজ হয়।তাই হযরতে ওলামায়ে কেরাম খুব একাবারেই হস্পিতালে না গেলেই নয় এমন অবস্থা ছাড়া হস্পিতাল যেতে নিষেধ করেছেন।
তাছাড়া যে মা সন্তান প্রসবের সময় যত বেশি কষ্ট অনুভব করবে সে মা সন্তান কে ততবেশি ভালোবাসবে ও কেয়ার করবে।
★ডেলিভারীর সময় ঘনিয়ে আসলে হবু মা ও বাবা দুজনকেই বেশীর থেকে বেশি আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য দোয়া করা।
সন্তান প্রসব কঠিন বা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় প্রসব বেদনা-কাতর নারী নিরুপায় ও মুসিবতগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত, সে হিসেবে বলা যায় এটা তার দোয়া কবুল হওয়ার মুহূর্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
বরং (আল্লাহ) তিনি, যিনি নিরুপায়ের ডাকে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন। (সূরা নামাল : ৬২)
কুরআনের আয়াত বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের হাদিস দ্বারা প্রসবকালীন নির্দিষ্ট কোন দোয়া বা আমল প্রমাণিত নেই।এ ক্ষেত্রে সাধারণ দোয়াই যথেষ্ট।
হাসপাতাল বা ক্লিনিক যেখানেই যান, কয়েকটি জিনিষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন—
১। যে কোন জটিলতা সামাল দিতে উন্নত ব্যবস্থা আছে কি না?
২। ডাক্তার বিশ্বস্থ ও অভিজ্ঞ কিনা?
৩। জীবানুমক্ত পরিবেশ ব্যবস্থা আছে কিনা?
৪। শিশুর প্রয়োজনে উন্নত শিশুবিভাগ আছে কিনা?
৫। শরিয়তের পর্দা ব্যবস্থা করা যাবে কিনা?
পূর্ব থেকে নিজের একটি ম্যাক্সী, ওড়না ও মাথায় রাখার জন্য একটি সুতির টুপি বা ছোট স্কার্ফ ধুয়ে জীবানুমুক্ত করে রাখা যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। যদি সিজার বা অপারেশন প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে টুপি ও গাউন থাকে তা ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা। বর্তমানে মেডিকেল শিক্ষায় ও চিকিৎসায় নতুন উন্নত রিভিউ এসেছে, সেটার ব্যপারে ডাক্তারের সাথে আপ টু ডেট থাকা।
বোনদের সুবিধার্থে কিছু প্রশ্ন যা ফিকাহ সংক্রান্ত তা উল্লেখ করছি, উত্তর দিয়েছেন শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী ।
★★★ গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায়, তাহলে এই কারণে কি সে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে?
👉👉গর্ববতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায় এবং তার সাথে প্রসব বেদনা থাকে, তাহলে উহা প্রসূতি অবস্থার রক্ত। এই কারণে সে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে। কিন্তু যদি তার সাথে প্রসব বেদনা না থাকে, তাহলে উহা কূ-রক্ত। এটাকে কোন কিছু গণ্য করা হবে না এবং ঐ রক্ত তাকে নামায-রোযা থেকেও বিরত রাখবে না।
★★★গর্ভবতীর সাধারণতঃ ঋতুস্রাব আসে না, যেমনটি ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “মহিলারা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা টের পায়।”
আর আলেম সমাজের বক্তব্য অনুযায়ী, আল্লাহপাক এই ঋতুস্রাবকে অন্তর্নিহিত এক তাৎপর্যকে লক্ষ্য করে সৃষ্টি করেছেন। তাহলো এই যে, গর্ভজাত সন্তানের জন্য খাদ্য হিসাবে কাজ করা। সেজন্য যখন পেটে সন্তান আসে, তখন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু কিছু কিছু মহিলার গর্ভধারণের আগের মতই ঋতুস্রাব চলতে দেখা যায়। এই ঋতুস্রাবও প্রকৃত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে। কেননা গর্ভাবস্থার কারণে তার ঋতুস্রাবের উপর কোন প্রভাব পড়ে নি। সুতরাং সাধারণ মহিলার ঋতুস্রাব যা থেকে বিরত রাখবে, গর্ভবতীর ঋতুস্রাবও তা থেকে বিরত রাখবে এবং উহা যা আবশ্যক করবে ইহাও তা আবশ্যক করবে। অনুরূপভাবে উহা যা থেকে দায়মুক্ত করবে ইহাও তা থেকে দায়মুক্ত করবে।
মূলকথা হচ্ছে, গর্ভধারিণীর রক্ত দুই ধরনেরঃ
এক ধরনের রক্ত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে। আর তা হচ্ছে, যেটা এখনও চলছে, যেমনিভাবে গর্ভধারণের পূর্বেও চলছিল। অর্থাৎ গর্ভধারণ এই ঋতুস্রাবের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। বিধায় ইহা ঋতুস্রাব হিসাবেই গণ্য হবে।
আরেক ধরনের রক্ত গর্ভধারিণীর নিকট হঠাৎ আসে- দুর্ঘটনাজনিত কারণে হোক বা কোন কিছু বহনের কারণে হোক অথবা কোন কিছু থেকে পড়ে গিয়ে হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক। এই ধরনের রক্তকে ঋতুস্রাব গণ্য করা হবে না; বরং তা শিরা থেকে আসা সাধারণ রক্ত। সুতরাং এই রক্ত তাকে নামায-রোযা থেকে বিরত রাখবে না; বরং সে পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে যদি গর্ভপাত ঘটেই যায়, তাহলে আলেমগণের বক্তব্য অনুযায়ী তার দুটো অবস্হাঃ
এক. গর্ভজাত সন্তান আকৃতি ধারণের পর বের হলে বের হওয়ার পরবর্তী রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। ফলে সে নামায-রোযা ত্যাগ করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে তার স্বামী সহবাস করা থেকে বিরত থাকবে।
দুই. গর্ভজাত সন্তান আকৃতি ধারণের পূর্বে বের হলে সেই রক্তকে প্রসূতি অবস্থার রক্ত গণ্য করা হবে না; বরং সেটা কূ-রক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে এবং উহা তাকে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত থেকেও বিরত রাখবে না।
বিশেষজ্ঞ মহল বলেন, বাচ্চা আকৃতি ধারণের সর্বনিম্ন সময় হচ্ছে ৮১ দিন। এ প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করেন- যিনি হচ্ছেন সর্বজনবিদিত সত্যবাদী- “তোমাদের যে কাউকে চল্লিশ দিন ধরে তার মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়, তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে জমাটবদ্ধ রক্ত হয় এবং তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর চারটি বিষয়ের নির্দেশনা দিয়ে তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়। অতঃপর তার রিযিক্ব, দুনিয়াতে তার অবস্থানকাল, তার আমলনামা এবং সে দুর্ভাগা হবে না সৌভাগ্যবান হবে তা তিনি নির্ধারণ করে দেন।”
বুখারী, ‘ অনুচ্ছেদ হা/৩৩৩২; মুসলিম, অনুচ্ছেদ হা/১, ২৬৪৩।
প্রথমতঃ তিন মাসে গর্ভপাত ঘটলে মহিলার যে রক্ত আসে, তাকে “প্রসূতি অবস্থার রক্ত” না বলে “কূ-রক্ত” বলা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ “৮০দিনের আগে যদি গর্ভপাত ঘটে, তাহলে উক্ত মহিলার রক্ত কূ-রক্ত হিসাবে পরিগণিত হবে”
এই হাদীছের আলোকে ৮১ দিনের আগে আকৃতি লাভ সম্ভব নয়। আর বিশেষজ্ঞগণের মতে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ৯০ দিনের আগে আকৃতি প্রকাশিত হয় না।
★★★সদ্য প্রসবকারিণী নারী কি সালাত-সিয়াম (নামায-রোযা) পরিত্যাগ করে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে নাকি রক্ত বন্ধ হওয়া না হওয়াই হলো মূল বিষয়? অর্থাৎ যখনই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই কি পবিত্র হয়ে যাবে এবং নামায শুরু করবে? আর পবিত্র হওয়ার সর্বনিম্ন কোন সময়সীমা আছে কি?
👉👉 মহিলার নিফাসের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই; বরং যতদিন রক্ত থাকবে, ততদিন অপেক্ষা করবে। এমতাবস্থায় নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসও করবে না।
পক্ষান্তরে যখনই সে পবিত্র হয়ে যাবে-যদিও তা চল্লিশ দিনের আগে হয়; এমনকি দশ বা পাঁচ দিনেও যদি সে পবিত্র হয়- তাহলে সে নামায পড়বে, রোযা রাখবে এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসও করবে। এতে কোন সমস্যা নেই। মূলকথাঃ প্রসূতি অবস্থা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটা বিষয়- যা থাকা আর না থাকার সাথে এ সম্পর্কীয় বিধিবিধান সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যখনই সেটা বিদ্যমান থাকবে, তখনই তার বিধিবিধান বলবৎ থাকবে। আর যখনই কোন মহিলা তা থেকে মুক্ত থাকবে, তখনই সে উহার বিধিবিধান থেকে মুক্ত থাকবে। কিন্তু যদি তার রক্ত ষাট দিনের বেশী সময় ধরে চলে, তাহলে বুঝতে হবে সে ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলা। এক্ষেত্রে সে শুধুমাত্র অন্যান্য মাসের ঋতুস্রাবের দিনগুলো সমপরিমাণ অপেক্ষা করবে এবং এরপরে বাকী দিনগুলোতে গোসল করে নামায পড়বে।
★★★ইস্তেহাযা এমন রক্ত-যা ঋতুস্রাব ও প্রসূতির সময় ছাড়া অন্য সময়ে বের হয় অথবা এতদুভয়ের পরপরই বের হয়। সে কারণে কোন মহিলার হায়েয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে যদি ঐ সময়সীমা অতিক্রম করে তার রক্ত চলে, তাহলে তাকে ইস্তেহাযা বলে। এটি মূলতঃ এক ধরনের রোগ। হায়েয ও ইস্তেহাযার মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ইস্তেহাযা লাল রঙের হয়। পক্ষান্তরে হায়েয হয় কালো রঙের অথবা গাঢ় লাল (প্রায় কালো) রঙের।
২. ইস্তেহাযার দুর্গন্ধ থাকে না। পক্ষান্তরে হায়যের দুর্গন্ধ থাকে।
৩. ইস্তেহাযার রক্ত বের হওয়ার পর জমাটবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হায়েয কখনও জমাটবদ্ধ হয় না।
৪. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হায়েয প্রচুর পরিমাণে বের হয়। কিন্তু ইস্তেহাযা কম পরিমাণ বের হয়।
৫. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হায়েয বেদনা সৃষ্টি করে। কিন্তু ইস্তেহাযা তা করে না।
৬. হায়েয খুব গাঢ় হয়। কিন্তু ইস্তেহাযা পাতলা হয় ইত্যাদি। (আল-আহকাম আল-ফিক্বহিইয়াহ আল-মুখতাছারাহ ফী আহকামি আহলিল আ‘যার)।
প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে মিলন হারাম। কিন্তু সেই অবস্থায় স্বামী নিজের কাম বাসনা চরিতার্থ করতে কি করতে পারে?
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
কিন্তু নিকটবর্তী হয়ো না’র অর্থ হল সঙ্গমের জন্য তাঁদের কাছে যেও না। অর্থাৎ যোনিপথে সঙ্গম হারাম। পায়খানারদ্বারেও সঙ্গম হারাম।
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেন,
“আল্লাহ আযযা অজাল্ল (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)
তিনি আরও বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অ অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এক সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।)
আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
তাহলে যৌন ক্ষুধা মিটাতে এ সময় করা যায় কি?
এর উত্তর দিয়েছেন মহানবী (সঃ)। তিনি বলেছেন,
“সঙ্গম ছাড়া সব কিছু কর।” (মুসলিম ৩০২ নং)
প্রসবকালীন সময়ে যা যা করা যাবে না--------
★সম্পূর্ণ উলঙ্গ করা যাবে না।শরীরের যে টুকু অংশ না খুললেই নয়।ঐ অংশ ব্যতিত আর বাড়তি কোন অংশ পর্দামুক্ত করা যাবে না।
★প্রসব কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নয়-এমন কারো সামনে শরীর খোলা জায়েজ নয়।অন্য মহিলাদেরও সামনে এসে সতর দেখা হারাম।
★নাভির নিচে কাপড় উম্মুক্ত করে দেখা জায়েজ নাই।
★ধাত্রীকে যদি পেট মর্দন করতে হয়।তাহলে সরাসরি পেট থেকে কাপড় সরিয়ে পেট মর্দন করা উচিৎ নয়।এক্ষেত্রে আগে রোগীকে চাদর দ্বারা আবৃত করে তারপর চাদরের ভিতর বাহিরে থেকে হাত ডুকিয়ে মর্দন করবে।
★প্রচন্ড ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অনেক বোন শরীয়াহ পরিপন্থী কথা বলে ফেলে(এত কষ্ট সহ্য করতে পারছি না,আর জীবনেও সন্তান নিবো না,এই রকম কষ্ট হবে জানলে আগেই নষ্ট করে ফেলতাম)।এই ধরনের কথা গুলো বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।এই সময় বেশি বেশি আল্লাহ কে ডাকা এবং দোয়া করা উচিত।
সন্তান জন্মানোর পর করনীয় ----
★ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর নাক, কান, গলা, মাথা ভালভাবে পরিস্কার করবে। পারলে গোসল করিয়ে নিলে ভালো হয়। অপরিচ্ছন্নতা থেকে শিশুর বহু রোগ জন্ম নেয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলেন।
বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকলে তাকে গোসল দেয়া আবশ্যক নয়। তবে যৌক্তিক কোন কারণ না থাকলে ময়লাসহ রাখা উচিত নয়। কারণ ময়লা ও নাপাক ব্যক্তির কাছে ফেরেস্তা আসে না।
★সম্ভব হলে শিশুকে প্রথম দুধ পান করানোর আগে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে নিয়ে সামান্য খেজুর চিবিয়ে শিশুর মুখে দিবে। এটাকেই তাহনীক বলে। -মুসলিম ৫৭৩৯
★জন্ম নেবার পর শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিবে মৃদু আওয়াজে।--শুয়াবুল ঈমানঃ৮৬১৯
৫-শিশু জন্ম নেবার সাত দিনের মাথায় মাথার চুল ফেলে চুল পরিমাপ করে সে ওজন পরিমাণ স্বর্ণ বা রোপা বা তার মূল্য দান করা মুস্তাহাব।--শুয়াবুল ঈমানঃ৮২৬২
৬-সন্তান জন্ম নেবার পর সপ্তম দিন ছেলে হলে দু’টি বকরী বা গরু-মহিষের ৭ ভাগের দুই ভাগ, আর মেয়ে হলে একটি বকরী বা গরু-মহীষের ৭ ভাগের একভাগ আক্বিকা হিসেবে জবাই করা এ মুস্তাহাব। আত্বীয় স্বজনকে খাওয়াবে গোস্ত, এবং গরীব দুঃখীদের খাওয়াবে। নিজেরাও খাবে। সেই সাথে ছেলেটির সুন্দর নামও রাখাও মুস্তাহাব এদিন।---আবু দাউদঃ২৮৬৬
৭দিনের মাথায় আক্বিকা দিতে না পারলে ১৪দিনের মাথায়, না হলে ২১ দিনের মাথায় আক্বিকা দিবে। অথবা বালেগ হওয়ার আগে যেকোন সময় জন্মের সাত দিন হিসেব করে সাত দিনের মাথায় আক্বিকা দেয়া উত্তম। জরুরী নয়। কুরবানীর সাথেও আক্বিকা দেয়া যায়।
বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে আক্বিকার প্রয়োজনীয়তা আর বাকি থাকে না। তাই নাবালেগ থাকা অবস্থায় আক্বিকা দেয়াই উচিত।
আক্বিকা দেয়া জরুরী কোন বিষয় নয়, বরং মুস্তাহাব।
কুসংস্কার ও শরীয়াহ পরিপন্থী কাজ--------
★কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট না হওয়া: কারণ কন্যা সন্তান আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তাছাড়া কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট হওয়া যেমন ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া তেমন জাহেলী যুগের লোকদের প্রথা সমর্থন করা। কারণ তারা মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মন্দ মনে করতো। আল্লাহ বলেন: “তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়।“ [ নাহল/৫৮
★প্রসূতি যে পাত্র ব্যবহার বা স্পর্শ করে তা না ধুয়ে ব্যবহার করা যবে না।এটা কুসংস্কার।
★নেফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে গেলেও ৪০ দিন পর্যন্ত নামাজ পড়া বা রোজা রাখা যাবে না। এটা শরীয়াহ পরিপন্থী কাজ।এই ব্যপারে উপরে আলোচনা হয়েছে।
★প্রসূতি গোসল করা না পর্যন্ত তার হাতে কিছু খাওয়া যাবে না।এটা কুসংস্কার।
★৪০ দিন পর্যন্ত স্বামী তার প্রসূতি স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।এটা কুসংস্কার। স্বামী তার স্ত্রীর রুমে প্রবেশ করতে পারবে তবে নিফাস থাকা কালিন সহবাস থেকে বিরিত থাকতে হবে।
★৬ দিনের দিন প্রসূতি কে গোসল করাতেই হবে।এমন টা ভাবা বা করা উচিৎ নয়।এটা কুসংস্কার।
★প্রসূতিকে গোসল করানোর সময় ধাত্রী বা যিনি গোসল করান,তিনি সরাসরি যে সব অঙ্গ ধরা বা দেখা নাজায়েজ ঐ সব অঙ্গও দেখে বা হাত দ্বারা মর্দন করে।এটা শরীয়াহ পরিপন্থী কাজ।এক্ষেত্রে যিনি গোসল করাবেন তিনি হাতে গিলাফ বা কাপড় পেছিয়ে মর্দন করাবে।
★প্রসূতি কে গোসল করানোর সময় ধুমধাম,নাচ,গান করা গুনাহের কাজ।
★অনেকেই মনে করেন প্রসূতি নারী যদি মারা যায় তাহলে তার আত্মা প্রেতাত্মা হয়ে যায়--এমন ধারনা ভুল।বরং হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয় এই অবস্থায় কোন বোন মারা গেলে তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দেওয়া হয়।
tag
0 coment rios:
আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।