সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ৩৩
Md Abdul Kaiyum
খুব সুন্দর ভাবেই খালিদ দুই বউকে নিয়ে সাংসারিক জীবন উপভোগ করছে।রিমা আর খাজিদার মধ্য আচরণ দেখলে কেউ বলবে না এর সতীন। যেন একই মায়ের দুই বোন।খাদিজা তো নিজের থেকে রিমার যত্ন বেশি করে।নিজের প্রেগনেন্সি অভিজ্ঞতা শেয়ার করে রিমা কে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। খাদিজা রিমাকে তেমন কাজ করতে দেয় না। সকল ধরনের বড় কাজ খাদিজা নিজে করে।সকালের নাস্তা খাদিজা নিজে করে।খাদিজা রিমা কে শুধু ছোটো ছোটো কাজ গুলো করতে দেয়।
খালিদ যতটা ঘরের ভিতর সুখের সাংসারিক জীবন উপভোগ করছে।তার চেয়ে বেশি অশান্তির জীবন বাহিরে উপভোগ করতে হয়।কারন খালিদ যে সমাজে বাস করে সে সমাজ যে আরবে বিশ্বনবী আশার আগে যে জাহিলিয়াত ছিল সেই জাহিলিয়াত কেও হার মানায়।
কারন এই সমাজে কেউ বিধবাকে বিয়ে করতে চায় না।বরং কেউ বিয়ে করলে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ে।
এই সমাজে কেউ সুন্নত মতাবেক চলে না বরং কেউ চলতে চাইলে তাকে অপদস্ত করা হয়।
এই সমাজের মানুষগুলো গুনাহ করতে লজ্জা পায় না। কিন্তু নেকির কাজ করতে লজ্জা পায়।
এই সমাজের মানুষ গুলো নারী অধিকারের নাম দিয়ে নারীদের ভোগের বস্তু বানায়।
খালিদকে অনেকেই অনেক কথা শুনালেও খালিদ তাদের কথা রাগান্বিত হতো না বা মন খারাপ ও করতো না।কারন সে মনে মনে ভাবতো নবীজি উনার আদর্শ বাস্তবায়ন করার সময় উনি এবং উনার সাহাবীদের অনেক কষ্ট ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে।
যে নবীজীকে সবাই আল আমিন বলত সেই নবীজী কে সবাই পাগল,নির্বোধ ইত্যাদি বলে অপবাদ দিতো।সাহাবীদের কত নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
উনাদের তুলনায় খালিদ যে কথা গুলো শুনছে তা কিছুই না।যারা যারা খালিদকে নিয়ে উপহাস করতো খালিদ তাদের কে বদ দোয়া না করে বরং নামাজ শেষে মোনাজাতে তাদের জন্য দোয়া করতো। আল্লাহ যেন তাদের ইসলামের খেদমত বানিয়ে দেয়।
রিমাকে বিয়ের পর যে ধরনের কথা শুনতো তা খালিদ মানিয়ে নিলো খাদিজাকে বিয়ের পর খালিদ কে অনেকেই আরো বাজে কথা বলা শুরু করে।অনেকেই তো খালিদের চরিত্র নিয়েই মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।
অনেকেই এমন টাই বলছে যে,কাসিমের মৃত্যুর পর খাদিজার সাথে খালিদের এমন কিছু হয় নাই তো,যে খালিদ তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।
এসব কানাঘুষা শুনার পর খালিদের বিষন্নতা বেড়ে যায়।অনেক কেই বুঝাতে গিয়েও ব্যর্থ হয় খালিদ। মাওলার দরবারে পানি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তার আর কিছুই ছিলনা।
তবে খালিদ কখনো বাহিরের ঘটনাগুলো ঘরে বলতো না।খালিদ তার পিতাকেও বলে দেয়।যেন তিনিও ঘরে কিছু না বলেন।
খালিদ চাই না বাহিরের কথা গুলো ঘরে জানিয়ে তার দুই বউয়ের মনে আঘাত দিতে।
তবে বাহিরের এত আশান্তির মধ্যেও ঘরের ভিতর দুই বউয়ের মাঝে বন্ধুসুলভ আচরণ তাকে মুগ্ধ করে।ঘরে আসলে বউদের কেয়ারে তার বিষন্নতা দূর হয়ে যায়।নিমিষেই সব ক্লান্তি/অপমান/অপবাদ দূর হয়ে যায়।
একদিন দোকানে খালিদ কিছুটা মন খারাপ করে বসে থাকে।দোকানে খতিব সাহেব মন খারাপ কেন তা জানতে চাইলে খালিদ খতিব সাহেব কে সব খুলে বলে।
পরের জুমায় খতিব সাহেব বিধবা বিয়ে,সমাজের বর্তমান জাহিলিয়াত, মিথ্যা অপবাদের শাস্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।পরে মানুষ অনেক কিছু ভুল বুঝতে পেরে অনেকেই খালিদ কে নিয়ে কানাঘুষা বন্ধ করে দেয়।তারপরেও কিছু মানুষ বলা বন্ধ করে নাই।খালিদ সবর করে যায় এবং তাদের হেদায়েত এর জন্য দোয়া করে যায়।
কয়েকদিন পর রিমার চেকআপের জন্য ডাক্তার দেখানো হয়।ডাক্তার বাচ্চার অবস্থান সম্পর্কে ধারনা লাভের জন্য আল্ট্রা করতে বলেন।
রিমাকে আল্ট্রা করে তার রিপোর্ট নিয়ে খাদিজা আর রিমা আবার ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে।
খাদিজা রিপোর্ট টি ডাক্তারের হাতে দেয়।ডাক্তার রিপোর্ট টি হাতে নিয়ে তা দেখে একটু বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়।এই রকম রিপোর্ট আগে কখনো ডাক্তারের চোখে পড়েনি।
ডাক্তার :বাচ্চার অবস্থান ভালো আছে।তারপরেও আপনারা একটু কাল আবার আসবেন।আমি এই রিপোর্ট টা আমার শিক্ষক কে দেখাতে চাই।আমি একটা বিষয় নিয়ে একটু রিসার্চ করবো।তবে আপনি ভয় পাবেন না।বাচ্চা ঠিক আছে।আমি রিচার্স এর জন্য রিপোর্ট টা রাখতে চাই। আপনারা একটু কাল আবার আসবেন।
খাদিজাঃ ঠিক আছে ডাক্তার।
ডাক্তার :আপনি চিন্তা করবেন না।বাচ্চা ঠিক আছে। আমি একটা গবেষনার জন্য রিপোর্ট টি রাখছি।কাল আসলে ইনশাআল্লাহ ফলাফল জানতে পারবেন।নিয়মিত খাবার খাবেন আর রেষ্ট নিবেন।ঠিক আছে.???
রিমাঃ ঠিক আছে।আসসালামু আলাইকুম।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে তারা বের হলে খালিদ ফলাফল জানতে চাইলে।খাদিজা সব বিস্তারিত বলে।কিন্তু রিমা যে চিন্তিত খালিদ তা বুঝতে পারে।পরে খালিদ রিমাকে শান্ত্বনা দিয়ে বাসায় নিয়ে আসে।
খাদিজাকে বিয়ের পর থেকে কোন সাপ্তাহে চার দিন রিমার সাথে আর বাকি তিন দিন খাদিজার সাথে আবার পরের সাপ্তাহে চার দিন খাদিজার সাথে আর বাকি তিন দিন রিমার সাথে এভাবেই খালিদ রাত্রি অতিবাহিত করে।প্রতিদিন রাত্রে আশার সময় খালিদ দুই বউয়ের জন্যেই কিছু না কিছু নিয়ে আসে ।প্রতিদিন সকালের নাস্তা দুপুর আর রাত্রের ভাত এক সাথে একই প্লেটে তিন জনেই করে।
সূচি অনুযায়ী আজ রাত্রে খালিদ রিমার সাথে থাকবে।
রাত্রে খালিদ বাসায় আসলে তারা তিন জনে একই প্লেটে ভাত খেয়ে নেয়।তারপর তারা সুরা মুলক আদায় করে।তারপর খাদিজা যখন নিজের রুমে চলে যাবে..
রিমাঃ বুবু....
খাদিজাঃ জী...
রিমাঃ চলুন না আজ রাত কিছু সময় একসাথে বাহিরে চাঁদের আলো উপভোগ করি।
খাদিজা রিমার কথায় রাজি হয়।তারপরেও খালিদের দিকে তাকায় খালিদ কি বলে তা জানার জন্য
খালিদঃ চলুন না.?? তিন জন একসাথে বসি..?
খাদিজা :চলুন (মুচকি হাসি দিয়ে)
তারপর তারা দরজা খুলে বাহিরে সিড়িতে বসে।খালিদ মাঝে আর রিমা খালিদের ডান পাশে আর খাদিজা বাম পাশে বসে।তারা দুইজনেই খালিদের কাধেঁ মাথা রেখে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
খালিদ আল্লাহর দরবারে শোকর আদায় করে। আল্লাহ পাক তাকে এমন দুই টা বউ উপহার দিয়েছে।যারা তাকে দুনিয়া থাকতেই জান্নাতের সুখ দিচ্ছে।
খালিদঃ জানেন....... আপনারা যে আমার কাধেঁ মাথা রেখেছেন আমার খুব ভালো লাগছে।কেমন ভালো লাগছে আমি বলে বুঝাতে পারবো না।শুধু অনুভব করছি।বিশ্বাস করেন আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি জান্নাতের সুখ অনুধাবন করছি।আলহামদুলিল্লাহ্।
রিমাঃ আলহামদুলিল্লাহ্। আমার ও খুব ভালো লাগছে।আমাদের জন্য দোয়া করবেন।আমরা যেন সব সময় আপনার খেদমত করতে পারি।
খাদিজা :ঠিক বলছেন বুবু।আমারও খুব ভালো লাগছে।আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সব সময় আমাদের মাঝে জোড় মিল মোহাব্বত রাখে।
খালিদ দুই বউয়ের কথা শুনি আকাশের দিকে তাকায়।মনে মনে কি যেন বলে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।তারপর দুই বউকে দুইটা চুমু দেয়।
খালিদঃ আমার জন্য আপনারাও দোয়া করবেন।আমি যেন সব সময় আপনাদের মাঝে ইনসাফ বজায় রাখতে পারি।
খালিদের কথা শুনে রিমা আর খাদিজা আমিন বলে।
তারপর তারা অনেক্ষন আকাশের দিকে তাকায় থাকে।
খালিদঃ আপনারা কি জানেন.? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও সুন্নত।
রিমাঃকই আমার তো জানা ছিল না।
খাদিজাঃ হুম।আলহামদুলিল্লাহ্ আমি জানতাম আকাশের দিকে তাকানো ও সুন্নত।আপনার বড়ভাইয়ের কাছ থেকে শুনছি।
রিমাঃ কই আপনি তো আগে আমায় কখনো বলেন নাই। বললে তো প্রত্যেক রাত্রে আপনাকে নিয়ে এই সুন্নত আদায় করতাম।
খালিদঃজী রাসুল সঃ কখনো কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।এটা সুন্নত।যখন আপনাকে নিয়ে আকাশ দেখছি তখন হয়তো কথাটি মনে ছিল না।আর ভাগ্যিস মনে ছিল না।যদি আপনাকে তখন বলতাম তাহলে তো আপনি প্রতিরাত্রেই এই সুন্নত আদায় করতেন তাহলে অন্যান্য কত গুরুত্বপুর্ণ সুন্নত মিস হয়ে যেত।
খালিদের কথা শুনে রিমা আর খাদিজা লজ্জা পায়।তারা আর কেউ কিছু বলে নাই।আরো কিছুক্ষন চাঁদের আলো উপভোগ করার পর তারা রুমে চলে যায়।
পরের দিন তারা আবার ডাক্তারের কাছে যায়।খাদিজা আর রিমা চেম্বারে প্রবেশ করে।কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে রিমা আর বড়ভাবির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।এই কথা শুনার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
চলবে ইনশাআল্লাহ
শিক্ষা
★দ্বীনের উপর চলা বা দ্বীন মেনে চলা এত সহজ কাজ নয়।আপনি চাইলে এর উপর চলতে পারবেন না।এর জন্য প্রয়োজন সর্বোচ্ছ পর্যায়ে ত্যাগ শিকার করা করা।
যে নবীকে আরবের লোকেরা আল আমিন বলতো সেই নবীকেই দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার কারনে পাগল নির্বোধ, যাদুকরী ইত্যাদি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।আপনিও দ্বীনের দাওয়াত বা দ্বীনের উপর চলতে গেলে আপনাকেও নানা ধরনের কথা বলে অপমান অপবাদ সহ্য করতে হবে।
দ্বীনের উপর অঠল থাকতে গিয়ে সাহাবীরা অনেক কষ্ট শিখার করেছে।হযরত বেলাল রাঃ উত্তপ্ত মরুভুমি পাথর চাপা বালির তাপ সহ্য করতে হয়েছে।আপনাকেও দ্বীনের উপর অঠল থাকতে হবে এই ধরনের কষ্টের সম্মুখিন হতে হবে।
দ্বীনের কারনে নবীজি সঃ প্রায় ৩ বছর গৃহবন্দি ছিল।আপনাকেও জেল জুলুমের সম্মুখিন হতে হবে।
যারা এসব কষ্টের মাঝেও দ্বীনের উপর অঠল থাকতে পারবে আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত রেডি করে রেখেছেন।
★আকাশের দিকে তাকানো সুন্নত। নবীজী সঃ মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাতেন।
সুরা বাকারা-১৪৪
মুসলিম ২৫৩১
সুরা বাকারা-১৪৪
মুসলিম ২৫৩১
tag
0 coment rios:
আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।