সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ১২Md Abdul Kaiyum
কাসিম তার রুমে গিয়ে তার বউয়ের জন্য আনা হাদিয়া তার বউকে দিয়ে একটু বিশ্রাম নেয়।আছরের আযান দিলে কাসিম অযু করে মসজিদের দিকে রওনা হয়। নামাজ পড়ার পর বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে মাগরিবের নামাজের পর ঘরে আসে।নিজের রুমে গিয়ে সুরা ওকিয়াহ তেলোয়াত করে।এই বাড়ির প্রত্যেকেই প্রতিদিন ফজরের পর সুরা ইয়াছিন,মাগরিবের পর সুরা ওকিয়াহ,এবং ইশার পর সুরা মুলক তেলোয়াত করে।সুরা ওকিয়াহ আদায়ের পর তারা নাস্তা করে এবং বিভিন্ন আলোচনা করে।আয়েশা ও রিমা রিমাদের রুমে নাস্তা করে। তারপর ইশার নামাজ অদায় করার পর বিভিন্ন আলোচনা ও আগামিকালের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ করে রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়। খাওয়ার সময় রিমার জন্য খাবার রুমে নিয়ে আসবে কিনা জানতে চাইলে রিমা আয়েশাকে জানিয়ে দেয় সে খালিদের জন্য অপেক্ষা করবে।
সবাই সবার রুমে খাবার খেয়ে চলে যায়। রিমা বসে বসে বই পড়ছে। সবাইর দেখাদেখি রিমার ভিতরেও বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।কিছু সময় পর দরজা থেকে খালিদের কন্ঠে সালামের শব্দ আসলে রিমা তারাতারি গিয়ে সালামের জওয়াব দিতে দিতে দরজা খুলে দেয়।খালিদের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিমা নিচে রেখে তার ওড়ানা দিয়ে খালিদের মুখ মুছে দেয়।এবং কপালে একটা চুমো দেয়।খালিদের কাছে যেন সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
রিমাঃ আসুন,আপনি রুমে গিয়ে বসুন।আমি ব্যাগ গুলো রেখে আসি।
খালিদঃ আপনি এইগুলো একা নিতে পারবেন না।
রিমাঃ পারবো,আমি পারবো
খালিদঃ আচ্ছা আপনি একটা নিন।আমি একটা নিই।
এই বলে খালিদ বেশি ওজনের ব্যাগটা নিজে নিয়ে কম ওজনের ব্যাগ টা রিমাকে দিয়ে ভিতরের রুমে নিয়ে যায়।
তারা যখন ব্যাগগুলো রাখছিলো তখন খালিদের মা চলে আসে।
খালিদের মাঃ বাবা.. আইসিস.??
খালিদঃ আসসালামু আইলাইকুম, হ্যা মা. আপনি এখনো ঘুমান নাই।
খালিদের মাঃওয়ালাইকুমুসসালাম. কোন ছেলে বাড়ির বাহিরে থাকলে সে যতক্ষণ না বাড়ি আসে ততক্ষণে কোন মা ঘুমাতে পারে না।তারাতারি ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে নে. ।তাছাড়া সারাদিন অনেক পরিশ্রম করছিস।
খালিদঃ ঠিক আছে মা.. আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।
রিমা আর খালিদ বাজারের ব্যাগ গুলো রেখে নিজেদের রুমে যায়।
রিমাঃ তারাতরি ফ্রেস হয়ে নিন।আমি ভাত বেড়ে দিচ্ছি।(গামছা হাতে দিয়ে)
খালিদঃ আপনি খেয়েছেনন??
রিমাঃ মাথা নেড়ে(না)।আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
খালিদঃ তাহলে তো আপনার প্রচুর খিদা পেয়েছে।আমি তারাতরি ফ্রেস হয়ে নিচ্ছি।আপনি ভাত বাড়ুন।
খালিদ ফ্রেস হতে চলে যায়।আর রিমা খাবারের রুমে ভাত বাড়তে চলে যায়।তারপর খালিদ ফ্রেস হয়ে খাবারের রুমে গিয়ে দেখে রিমা ২প্লেটে আলাদা আলাদা ভাত বাড়ছে।
খালিদঃ আপনার আপত্তি না থাকলে একটা কথা বলি?
রিমাঃ জী বলুন।
খালিদঃ আমার সপ্ন ছিল আমার বিয়ের পর আমি আর আমার বউ একই প্লেটে খাবার খাবো।এটা সুন্নত। আপনি যদি আমার সাথে একই প্লেটে খেতেন(বিনয়ী সুরে)
রিমাঃ ঠিক আছে।আপনি যেভবে বলবেন সেভাবেই হবে।
খালিদঃ না আসলে অনেকে আবার একসাথে খেতে পারে না তো. তাই আপনার যদি আবার সমস্যা হয়.?
রিমাঃ একই প্লেটে আগে কখনো খাই নাই। তাই অভ্যাস ও নাই। যেহেতু এটা সুন্নত আজ থেকে না হয় অভ্যাস করবো।
খালিদঃ জাযাকুমুল্লাহ। আপনি তাহলে ঐ বড় প্লেটে ভাত সব গুলো নিয়ে এখানে দস্তরখানায় চলে আসুন।
রিমা ভাতগুলো বড় প্লেটে নিয়ে খাটের উপর দস্তরখানায় রেখে খালিদের সামনাসামনি বসে।তারপর দোয়া পড়ার পর খালিদ ১ম লোকমা রিমার মুখে তুলে দেয়। রিমা অবাক হয়ে যায়।তার চোখে অটোমেটিক পানি চলে আসে।
খালিদঃ আপনার চোখে পানি কেন.??আপনার কি বসতে কষ্ট হচ্ছে.??
রিমা কান্নার জন্য কিছুই বলতে পারছে না। অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে..
রিমাঃ না. আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না.আগে কখনো কেউ এভাবে মুখে তুলে দেয় নাই তো.. তাই এর মাঝে আনন্দ বুঝি নাই। খুব ভালো লাগছে তাই আনন্দে কান্না আসছে।
খালিদঃ আমায় খাইয়ে দিবেন না।
তারপর রিমা খালিদের মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেয়। খালিদ মুখে নেওয়ার পর তারও চোখ থেকে পানি পড়া শুরু করে.
রিমাঃ আপনারর চোখে পানি কেন?
খালিদঃ আজ আমার কত দিনের সপ্ন সত্যি হলো. তাই চোখে পানি চলে আসলো।
তারপর তারা একে অপরকে লোকমা তুলে দিয়ে খাবার শেষ করে কিন্তু এক বারের জন্যেওকেউ নিজের হাতে নিজের মুখে খাবার নেয় নি।খাবার শেষে মাওলারর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শিক্ষা
১) ফজর, মাগরিব,ও ইশার পর যথাক্রমে সুরা ইয়াছিন,সুরা ওকিয়াহ, ও সুরা মুলক পড়ার অভ্যাস করুন।প্রথম প্রথম মনের সাথে যুদ্ধ করে হলেও পড়তে থাকুন। ইনশাআল্লাহ একদিন অভ্যাস হয়ে যাবে।
সূরা ইয়াছিন,সূরা ওকিয়াহ,ও সূরা মুলক পড়ার ফজিলতঃ
★ফজরের পর সূরা ইয়াছিন পড়া
ফায়দাঃএকবার সুরা ইয়াছিন পড়লে দশ বার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়।
(তিরমিযী হাদীস নংঃ২৮৮৭)
★সূরা ওকিয়াহ পড়া
সময়ঃমাগরিব এর পর থেকে এশার আগ পর্যন্ত।
ফায়দাঃআল্লাহ তায়ালা রিজিকের মধ্য প্রশস্ততা ও বরকত দান করবেন।
(তাফসিরে ইবনে কাসীর- পৃঃ৪/২৯৭)
★এশার পর মুলক পড়া।
ফায়দাঃআল্লাহ তায়ালা কবরের আযাব কেয়ামতের আগ পর্যন্ত মাফ করে দিবেন।
(তিরমিযী হাদীস নং২৮৭৫)
★ফজরের পর সূরা ইয়াছিন পড়া
ফায়দাঃএকবার সুরা ইয়াছিন পড়লে দশ বার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়।
(তিরমিযী হাদীস নংঃ২৮৮৭)
★সূরা ওকিয়াহ পড়া
সময়ঃমাগরিব এর পর থেকে এশার আগ পর্যন্ত।
ফায়দাঃআল্লাহ তায়ালা রিজিকের মধ্য প্রশস্ততা ও বরকত দান করবেন।
(তাফসিরে ইবনে কাসীর- পৃঃ৪/২৯৭)
★এশার পর মুলক পড়া।
ফায়দাঃআল্লাহ তায়ালা কবরের আযাব কেয়ামতের আগ পর্যন্ত মাফ করে দিবেন।
(তিরমিযী হাদীস নং২৮৭৫)
২)রাতে আড্ডা দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার জন্য আপনার সহধর্মিণী না খেয়ে অপেক্ষা করতাছে।আপনার জন্য আপনার মা না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করতাছে। আপনার বাচ্চারা আপনার জন্য অপেক্ষা করতাছে। তাই বন্ধুদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে তারাতারি বাসায় চলে আসুন।বন্ধুদের সাথে সব সময় হাসি তামাশায় সময় না পার করে ঐ সময় ভাগ করে কিছু নিজের ফ্যামিলিকে দিন।এতে একের প্রতি অপরের মহব্বত সৃষ্টি হয়।
আপনি রাত করে বাড়ি ফিরেন।তারমানে আপনার স্ত্রী একাকিত্ব অনুভব করবে। অনেক সময় এই একাকিত্ব দুর করার জন্য আপনার স্ত্রী তার কোন স্কুল/কলেজের কোন বন্ধুর সাথে ফোনে/চ্যাটে কথা বলে সময় পার করে।আর এতেই পরকিয়ার সৃষ্টি হয়।
৩)(বোনদের জন্য)আপনার বর যত রাত করেই বাড়ি আসুক।তারজন্য অপেক্ষা করুন।তার জন্য না খেয়ে বসে থাকুন।এতে আপনার প্রতি আপনার বরের মহব্বত সৃষ্টি হবে।
৪)স্বামি স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।এটা সুন্নত এবং এতে একে অপরের প্রতি মহব্বত বেশি হবে।
৫) আপনি যখন ভাত খেতে বসেন আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন আপনার স্ত্রী আপনাকে মাছের বড় টুকরাটা আপনাকে দেয়। গোস্তের বড় টুকরা টা আপনাকে দেয়।আর আপনার স্ত্রী ছোট টুকরা বা গোস্তের হাড় গুলো সে নিজে নেয়। অথচ শারীরিক ভাবে আপনার স্ত্রী অনেক দুর্বল। উচিৎ ছিল বড় টুকরা টা তার খাওয়ার। কিন্তু না খেয়ে আপনাকে দেয়। তাই একই প্লেটে খাবার খেলে দুজনই একই খাবার খেতে পারবেন।আপনিও বুঝতে পারবেন আপনার জন্য আপনার স্ত্রী কতটা কোরবানী করে।
tag
0 coment rios:
আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।