Thursday, 13 September 2018

সুন্নত জিন্দার মিশন। পর্ব ১৬ Md Abdul Kaiyum

সুন্নত জিন্দার মিশন। পর্ব ১৬Md Abdul Kaiyum

খালিদ তার শশুরদের গাড়িতে তুলে দিয়ে বাড়ির থেকে যাওয়া কাজ গুলোতে হাত দেয়। কাসিম ও তাকে সাহায্য করে। বড় ভাবি আর রিমাও ঘরের ভিতর কাজে হাত দেয়। মাগরিবের নামাজের আযান দিলে তারা নামাজ পড়তে যায়। নামাজ পড়ে এসে আবার বাকী কাজ গুলো করে ফেলে। কাজ শেষ করে খালিদ রুমে আসে।তার শরীর পুরো শরীর ক্লান্ত। রুমে এসে সালাম দিয়ে অন্য কোন কথা না বলে খালিদ খাটে শুয়ে পড়ে।রিমা বুঝতে পারে খালিদ খুব ক্লান্ত তাই সে মাথার কাছে এসে আস্তে আস্তে মাথার চুল গুলো টেনে দেয়। কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারে জ্বর আসবে আসবে ভাব।
রিমাঃ আপনার তো মনে হয় গায়ে জ্বর আসবে??
খালিদঃ ও, কিছু না... আপনি কষ্ট করে আমার জন্য পানি আনতে পারবেন.? পানি খাবো।
রিমা উঠে গিয়ে দেখে জগে পানি নেই।তাই সে তারাতরি জগ নিয়ে টিউবওয়েলের কাছে চলে যায়। টিউবওয়েল চেপে পানি নিয়ে তারাতারি রুমে এসে খালিদ কে একগ্লাস পানি দেয়। খালিদ পানি পান করে আবার শুয়ে পড়ে। রিমা জগ আর গ্লাস রেখে আবার খালিদের মাথার চুল গুলো টেনে দেয়।কিছুক্ষন পর এশার আযান দিলে খালিদ তারাতরি উঠে পড়ে।
খালিদঃ আযান দিয়া দিছে মসজিদে যেতে হবে।
রিমাঃ আপনার শরীর টা দুর্বল আজ না হয় ঘরে পড়ে নিন।
খালিদঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌ মসজিদে যাওয়ার মত এখনো সেই শক্তি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।তাহলে কেন ঘরে নামাজ পড়বো।
তারপর খালিদ অযু করে এসে তাইয়াতুল অযু নামাজ পড়ার পর ৪রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে মসজিদে রওনা দেয়।যদি ও হাটতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে তার। রিমাও অযু করে এসে রুমে তাজবিহ আদায় করছে। আজ তাদের রুমেই তাজবিহ আদায় করে সে, নামাজের রুমে যায় নাই। খালিদের জন্য তার খুব খারাপ লাগছে।তাই বার বার খালিদের সুস্থতারর জন্য দোয়া করছে।আর খালিদের জন্য সে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পর খালিদ রুমে আসে। রিমা গিয়ে তার পাঞ্জাবি খুলতে সাহায্য করে। তারপর খালিদ কে ধরে নিয়ে খাটে শুয়ে দেয় রিমা। কপালে হাত দিয়ে দেখে কপাল যেন পুড়ে যাবে যাবে এমন অবস্থা। তারাতরি রিমা তার শশুর শাশুড়ি কে ডাক দেয়।তারা এসে খালিদের কপালে হাত দিয়ে দেখে গায়ে অনেক জ্বর। তারা কাসিম কে জানালে কাসিম সালাম দিয়ে ঘরে ডুকে।তখন রিমা রুমের এক পাশে চলে যায়। কাসিম গায়ে হাত দিয়ে খালিদের যে অনেক জ্বর তা অনুভব করে।
কাসিমঃ তুমি খালিদ কে জল পট্টি দাও। আমি বরং ফার্মাসিতে যাচ্ছি।(রিমা কে উদ্দেশ্য করে)
কাসিম ফার্মাসির উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বাহির হয়ে গেলে রিমা জল পট্টির ব্যবস্থা করে খালিদের কপালে জল পট্টি দেয়। কিছুক্ষন পর কাসিম আর তার পিতামাতা খালিদের রুমে সালাম দিয়ে ডুকে। তখন রিমা আবার রুমের এক পাশে চলে যায়। কাসিম ফার্মাসিস্ট এর পরামর্শ করলে ফার্মাসিস্ট আপাতত প্যারাসিটামল দেয় আর রেষ্ট নিতে বলে। তখন কাসিম খালিদ কে তুলে প্যারাসিটামল একটা খাইয়ে দেয়। আর বিশ্রাম নিতে বলে। তারপর তারা ঘর থেকে চলে যায়। অবশ্য খালিদের মা থেকে যায়। মায়ের মন তো.. যাইতে ইচ্ছে করেনা। তিনিও অনেক্ষন খালিদ কে জলপট্টি দেয়।
রিমাঃ মা... অনেম রাত হয়েছে। আমি আছি আপনি বরং একটু বিশ্রাম নিন।
যদি ও খালিদের মা যেতে চাচ্ছিল না।কিন্তু রিমা বারবার বলাতে খালিদের মা উনার রুমে চলে যায়।তারপর রিমা খালিদের পাশে বসে জল পট্টি দেয় আর সাথে আস্তে আস্তে খালিদের চুল গুলো টেনে দেয়। খালিদ ঘুমিয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ এভাবে করার পর রিমা খালিদের গায়ে কাঁথা (মালসি) টেনে দিয়ে অযু করে আসে। নামাজের বিচানা বিচিয়ে নামাজের বিচানায় বসে পড়ে। অনেকক্ষণ জিকির /দোয়া দুরুদ পড়ার পর মোনাজাত ধরে। মোনাজাতে খালিদের সুস্থতা কামনায় মাওলার কাছে বার বার ফরিয়াদ করে। এক পর্যায়ে রিমা মাওলার দরবারে কান্না শুরু করে দেয়।কান্নার আওয়াজে খালিদের ঘুম ভেংগে যায়। খালিদ উঠে বসে পড়ে।ঐদিকে রিমার খেয়াল নাই। গুন গুন শব্দে সে কি যেন বলতেছে। স্পষ্ট বুঝা না গেলেও খালিদ এই টুকু বুঝছে তার জন্যেই কান্না করছে।তারপর রিমা মোনাজাত শেষ করে খাটের দিকে তাকাতেই দেখে খালিদ বসে আসে।তারাতরি উঠে এসে কপালে হাত দেয়।আগের থেকে গরম অনুভুতি কম হচ্ছে। রিমা খেয়াল করে খালিদের পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। রিমা তারাতারি খালিদের গায়ে থেকে গেঞ্জি খুলে গামছা দিয়ে পুরো শরীর মুছে দেয়।তারপর হালকা গামছাকে ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেয়। আরেকটা গেঞ্জি পড়িয়ে দেয়।
রিমাঃ এখন কেমন লাগছে।
খালিদঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌।আগের থেকে ভালো আপনি সারারাত ঘুমান নি তাই না??
রিমা কিচ্ছু বলছেনা।
খালিদঃ সামান্য জ্বর। এটা এমনেই সেরে যেত। এত কষ্ট কেন যে করতে গেলেন। সারারাত বসে বসে আমার গায়ে জল পট্টি দিছেন তাই না?
রিমা এবারো কিচ্ছু বলছেনা।
খালিদঃ জানেন হুজুরদের মুখে শুনেছি অসুখ ও নাকি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বড় নেয়ামত। এতে নাকি গুনাহ মাফ হয়।
রিমাঃ আমিও এমনটাই শুনেছি।
খালিদঃ আপনি আমাকে খুব ভালোবাসেন তাই না.? তাই তো সারারাত না ঘুমিয়ে আমার জন্য........
""আমার জন্য ""বলার পর খালিদ আর কোন কথা বলার সুযোগ পাই নি। কারন ততক্ষনে রিমার চোখ থেকে পানি পড়া শুরু করে।আর রিমা খালিদকে জড়িয়ে ধরে। খালিদ ও রিমাকে জড়িয়ে ধরে।
রিমাঃ আমি সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসি।
খালিদঃ আমিও আপনাকে খুব খুব ভালোবাসি।
খালিদ খেয়াল করে রিমা তাকে খুব জোর করেই ধরছে এবং ছাড়তে চাচ্ছে না। তাই খালিদ ও আর ছাড়াবার চেষ্টা করছে না। ঐদিকে রিমার চোখের পানি পড়া বন্ধ হচ্ছে না। অনবরত পানি পড়তেই আছে। সে যেন এক সুখের কান্না করেই আছে। কিছুক্ষন পর মুয়াজ্জিনের কন্ঠে সেই মধুর আল্লাহু আকবর এর ডাক।
খালিদঃ এইযে ছাড়বেন না আমায়.??
রিমাঃ না.??? (আবেগ মাখা কান্না কন্ঠে)যত দিন বেচে থাকি এভাবে ধরে রাখবো।
খালিদঃ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এখন তো উঠতে হবে। আযান যে দিয়া দিছে। মসজিদে তো যেতে হবে আমাকে।
মসজিদের কথা বলাতে রিমা তাকে ছেড়ে দেয়। রিমা খেয়াল করে সে অংশে মাথা দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঐ অংশের স্থানে গেঞ্জি অনেকাংশ ভিজে গেছে।
রিমাঃ আপনার গেঞ্জি ভিজে গেছে অথচ আপনি আমায় বলেননি কেন? এখন তো আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।
খালিদঃ যেভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কোথাও ভিজে গেছে নাকি আগুন ধরে গেছে তা কি অনুমান করার সুযোগ আছে.??
রিমা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। খালিদ রিমার কপালে একটা চুমু দিয়ে খাট থেকে নেমে অযু করতে চলে যায়। অযু করে এসে সুন্নত পড়ে মসজিদে রওনা দেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ
শিক্ষা
১) শত ব্যস্ততার মাঝেও নামাজ ত্যাগ করা যাবে না। আর ছেলেদের জন্য অবশ্যই নামাজ জামাতে পড়তে হবে। ★আল্লাহ তায়ালা বলেন ""তোমরা সালাত কায়িম কর এবং যাকাত দাও এবং রুকু কর তাদের সাথে যারা রুকু করে """( সুরা বাকারা-৪৩) এবং ★নবী সঃ বলেন ""জামাতে নামাজ আদায় করা একাকি নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুন বেশি সওয়াব""(বুখারী-৬১৭)।
মুসলমানের সন্তান কোন ভাবেই নামাজ ত্যাগ করতে পারে না। কারন ★রাসুল সঃ বলেন """মানুষের শিরক এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ ছেড়ে দেওয়া"""(মুসলিম -২৪৭)।
২) অসুস্থতা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য
★আসুস্থতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক নিয়ামত।আল্লাহ বলেন""নিশ্চয় কষ্টের সাথেই সুখ রয়েছে""। (সুরা ইনশিয়ার ৬)।
★অসুস্থতা দ্বারা আল্লাহ আমাদের পরিক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন""আমি অবশ্যই তোমাদের কে পরীক্ষা করবো কিছু ভয় ক্ষুধা এবং জান মাল ও ফল ফলাদি স্বল্পতার মাধ্যমে"""(সুরা বাকারা-৫৫)।
★অসুস্থতা হলে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। ""আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও""(বাকারা-৫৬)
নবী সঃ বলেন""যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতারর সাথে একটি রাত কাটাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সদ্যপ্রসূত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দিবেন""(বুখারী -৫২৪২)।
★অসুস্থতার দ্বারা আমাদের গুনাহ মাফ হয়। নবী সঃ বলেন ""মুসলমানের উপর যেসব বিপদ আপদ ও বালা মুসিবত পতিত হয় এর দ্বানা আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দেন।এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও গুনাহ মাফ হয়"(মুসলিম -৫২৩৮)।
★ আল্লাহ তায়ালা কারো কল্যাণ চাইলে তাকে মুসিবতে লিপ্ত করেন(বুখারী -৫২৪২)
★ওষুধের উপর একিন করা যাবে। সুন্নত হিসেবে ওষুধ খাইতে হবে।
৩)স্বামির জন্য স্ত্রীর করনীয়
★স্বামির আনুগত্য ও খেদমত করা স্ত্রীর উপর ওয়াজিব।
★ স্বামি কাছে থাকলে স্বামির অনুমতি ব্যতিত নফল নামাজ নফল রোজা রাখা উচিত নয়।তবে স্বামি যদি বাহিরে থাকে তাহলে অনুমতির প্রয়জন নেই।
★স্বামির নিকট তার সাধ্যের বাহিরে এমন জিনিষ আবদার করা উচিত না।
★ স্বামির অনুমতি ব্যতিত ঘর থেকে বের হওয়া উচিত না। তার টাকা পয়সা কাউকে দেওয়া উচিত না এবং তার অনুমতি ব্যতিত ঘরের কোন আসবাবপত্র ক্রয় করা উচিচ নয়।
★স্বামি যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য আহবান করলে তার ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত,ফরজ। শরীয়ত সম্মত ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। যেমন হায়েজ, নেফাজ অবস্থা। "" কোন স্ত্রী যদি স্বামির বিচানা পরিহার করে রাত কাটায় তাহলে সকাল পর্যন্ত তাকে ফিরিস্তারা অভিশাপ করতে থাকে(মুসলিম) ""
★স্বামি অস্বচ্ছল,দরিদ্র বা কুৎসিত হলে তাকে তুচ্ছ না করা।
★আগেই বলছিলাম বরের নাম ধরে না ডাকা। এটাটা বেয়াদবি।
★কারও সম্মুখে স্বামির সমালোচনা না করা।
★ স্বামির উদ্দেশ্যে সেজে গুজে পরিপাটি হয়ে থাকা এবং হাসি মুখে কথা বলা কর্তব্য।
★স্বামির শারিরিক, মানুষিক, আর্থিক অবস্থা বুঝে চলা উচিত।
★স্বামি বাহিরের থেকে আসলে তার যত্ন নেওয়া।তার সুবিধা অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখা।
★ স্বামির ঘরের রান্নাকরা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি আইনগত ভাবে স্ত্রীর দায়িত্ব নয়। তবে এটা তার নৈতিক কর্তব্য। শশুর শাশুড়ির খেদমত ও এর আওতায়।
★কখনো স্বামি কে খোটা না দেওয়া। উচ্চ আওয়াজে তার সাথে কথা না বলা। আদব ও ভালোবাসা মিশ্রিত কন্ঠে কথা বলা।
★ সতীত্ব রক্ষা করা।
★সন্তানাদি লালন পালন করা। সন্তানকে দুধ পান করানো স্ত্রীর উপর ওয়াজিব (মারেফুল কোরআন)।
(বিঃদ্রঃ দাম্পত্য জীবন সুন্দর ভাবে করতে একে অপরের অধিকার গুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ইনশাআল্লাহ অন্য কোন পর্বে স্ত্রীর জন্য স্বামির করনীয় নিয়ে আলোচনা করবো)

tag 

islamic bangla gojol,bangla waz,gojol,bangla islamic song,islamic gojol,all bangla gojol,islamic,bangla 
gojol 2018, bangla gojol mp3,bangla waz, wazkalarab,kalarab song,kalarab new song,kalarab tv,kalarab shilpi,kalarab new gojol,kalarab live,kalarab all song,kalarab ar gojol,kalarab best song,kalarab bangla gojol,kalarab bangla,kalarab bodruzzaman,kalarab by abu rayhan,kalarab eid song,kalarab gojol new,kalarab gojol ma,kalarab gojol 2018,kalarab gojol new 2018,kalarab holy tune,kalarab jazakallah,kalarab song,kalarab songit,kalarab song allah allah,kalarab song 2018,kalarab song new,kalarab song salat,kalarab song new 2018,kalarab song salam,kalarab best song,song by kalarab,kalarab video song,new kalarab song,kalarab gojol new,kalarab gojol ma,kalarab gojol sal


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।