সুন্নত জিন্দার মিশন। পর্ব ১৭Md Abdul Kaiyum
খালিদ নামাজ পড়ে এসে সুরা ইয়াছিন তেলোওয়াত করে।রিমা পাশে বসেই তেলাওয়াত শুনে। সুরা ইয়াছিন তেলোওয়াত করার পর খালিদ তার বড় ভাই কাসিম কে এগিয়ে দেওয়ার জন্য বের হয়।ততক্ষণে কাসিম হালকা নাস্তা শেষ করে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। তারপর খালিদ ব্যাগ হাতে নিতে চাইলে কাসিম বাধা দেয়।
কাসিমঃ তুই যাওয়া লাগবে না ভাই, আমি একাই যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তুই বরং একটু বিশ্রাম নে।তোকে এখনো দুর্বল দুর্বল মনে হচ্ছে।
খালিদঃও.. কিছু না.. আমি পারবো, আমার হাতে দাও।
কাসিমঃ আমি কি বলছি তুই পারবি না.. যা ভাই একটু বিশ্রাম নে।
কিন্তু খালিদ কোন কথায় শুনতে রাজি নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইকে গাড়িতে তুলে দিতে পারবে তার যেন শান্তি নাই।
কাসিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল(অনেকটা বাধ্য হয়ে)। তবে ব্যাগ আমি বহন করবো।তুই শুধু হাঠবি।
তারপর কাসিম পিতামাতা ও তার বউ থেকে বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। খালিদ তার সাথে বাজার পর্যন্ত প্রায় ১কিলোমিটার হেঁটে আসে।কারন সকাল বেলা রিক্সা পাওয়া যায় না। তারপর বাজারে এসে বাসের টিকেট কেটে কাসিম বিসমিল্লাহ বলে গাড়িতে উঠে। বাস যখন বাজার অতিক্রম করে চলে যায়,তখন খালিদ বাসায় ফিরে আসে। তখন বাড়ি মহিলারা নাস্তা বানাচ্ছে।খালিদ রুমে এসে এই কয়দিনের হিসাব মিলাচ্ছে।
নাস্তা বানানো শেষ হলে রিমা খালিদের জন্য রুমে নাস্তা নিয়ে আসে।ততক্ষনে খালিদের মোটামুটি হিসাব শেষ করে ফেলে।
রিমাঃ নিন.. নাস্তা করে নিন।
খালিদঃ আপনি করেছেন.??
রিমাঃ না এখনো করিনি
খালিদঃ তাহলে আসেন. একসাথে করি।
রিমাঃ আমারও ইচ্ছে ছিল আপনার সাথে করার কিন্তু আব্বা আম্মা.....
খালিদঃ আচ্ছা এখানে এসে বসুন।
রিমা খালিদের পাশে গিয়ে বসলে খালিদ রুটির কিছু অংশ নিয়ে তাতে ডিম ভাজি নিয়ে রিমার মুখে দেয়।
খালিদঃ দিন. এবার আমাকেও আপনি খাবার তুলে দিন।
রিমাও রুটির কিছু অংশ নিয়ে তাতে ডিম ভাজি নিয়ে খালিদের মুখে তুলে দেয়। খালিদের খাওয়া শেষ হলে রিমার সামনে পানির গ্লাস তুলে দেয়। রিমা সেখান থেকে কিছু পানি পান করে। পরে খালিদ গ্লাসে মুখ লাগিয়ে পানি পান করে ঠিক যেই জায়গায় রিমা মুখ লাগিয়ে পানি পান করেছিল।
খালিদঃবাকি টা আমি খেয়ে নিচ্ছি। আপনি বরং আব্বা আম্মার সাথে বসে তাদের কিছু খেদমত করুন।
রিমাঃ ঠিক আছে।
তারপর রিমা তাদের রুম থেকে খাবারের রুমে চলে যায়। সেখানে খালিদের বাবা মা খাবার খাচ্ছে।
খালিদের মাঃ কিরে মা.... চলি আসলি যে। খালিদের কি খাবার শেষ।
রিমাঃ না মা। উনি আপনাদের সাথে খেতে বলছে।আপনাদের কি লাগবে না লাগবে তা দেখতে বলেছে।
খালিদের মাঃ দেখছ পাগল ছেলের কান্ড।নিজে অসুস্থ তার খবর নাই বউ কে পাঠাইছে বাপ মায়ের খেদমত করতে। মা তুমি বরং তোমার খাবার নিয়ে তোমাদের রুমে যাও। এখানে বড় বউ তো আছে। আমাদের সমস্যা হবে না।
বড়ভাবীঃ ভাবী... আমি তো এখানে আছি ই। আপনি যান ভাইয়ার খেদমত করেন।এই কয় দিন অনেক ভাইয়ার উপর দখল(চাপ) গেছে।
রিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর বড়ভাবি রিমার হাতে প্লেটে রুটি আর ডিম ভাজি তুলে দেয়। রিমা তা নিয়ে তাদের রুমে চলে যায়।
খালিদঃ আপনি চলে আসছেন.?? আম্মু আবার কি ভাববে।
রিমাঃ কিছুই ভাববে না। উনি ই আমাকে পাঠাইছে আপনার খেদমত করার জন্য।ঐখানে বড় ভাবি আছে।
খালিদঃ ও. আসুন তাহলে বসুন।দিন আমার মুখে খাবার তুলে দিন।
তারপর রিমা পাশে গিয়ে বসে একে অপরের মুখে খাবার তুলে দিয়ে খাবার শেষ করে। তারপর রিমা খালিদের মুখ নিজের ওড়না দিয়ে মুছে দেয় ।
রিমাঃ নিন এবার একটু ঘুমান। আপনার বিশ্রাম নেওয়া জরুরী।
খালিদঃ আপনি তো মাদ্রাসায় পড়েছেন।তাহলে কিভাবে বুঝলেন আমার বিশ্রামের জরুরী।এটা ডাক্তার বলতে পারে কার কখন কি প্রয়োজন।
রিমাঃ এই যে মিস্টার.. প্রত্যেক মানুষের ২জন করে ডাক্তার থাকে, যাদের ডাক্তার হতে ডিগ্রী লাগেনা। তারা সব বলতে পারে। এক. মা দুই. সহধার্মীনি।
খালিদঃ ও.. তো ডাক্তার সাহেবা আমার এখন বুঝি বিশ্রামের প্রয়োজন..?
রিমাঃ জী আমার রুগী সাহেব। এখন একটু বিশ্রাম নিন।ঘুমান।
খালিদঃ ডাক্তার সাহেবা...যদি আমার একটা আবধার রাখেন তাহলে আমি ঘুমাবো, না হলে ঘুমাবো না।
রিমাঃ এই যে রুগী সাহেব... ডাক্তারের কাজ প্রেসকাইভ করা... কোন আবধার রাখা ডাক্তারের কাজ নয়। আচ্ছা তারপরেও শুনি আপনার কি আবধার।
খালিদঃ ডাক্তার সাহেবা যদি তার কোলে এই রুগীকে মাথা রেখে ঘুমাতে দেয়, তাহলে এই রুগী ঘুমাবে, না হয় এই রুগী ঘুমাবে না।
রিমাঃ রুগীর এই আবধার রাখতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।(একটু ভাব নিয়ে)
খালিদঃ ঠিক আছে.. তাহলে আমিও ঘুমাবো না.তাতে আমার শরীরর আরো খারাপ হয়ে যাবে।
রিমাঃ আপনার শরীর খারাপ হলে আমার কি.??
খালিদঃ ঠিক আছে আমার শরীর খারাপ হলে যদি কারো কিছু না ই হয়। তাহলে আমার শরীর খারাপ ই হোক। আমি আর ঘুমাবো না। শরীর যত খারাপ হওয়ার হোক তাতে কার কি.??(কিছুটা ভভালোবাসা মিশ্রিত রাগ রাগ ভাব নিয়ে)
রিমাঃ ওরে.. ওরে..ওরে আমার রুগি সাহেব দেখি রাগ ও করতে পারে।
তারপর রিমা খাটে গিয়ে হাটু ভাজ করে বসে আর খালিদ তার কোলে মাথে রাখে।
রিমাঃ আপনি আমার কাছে আবধার করবেন আর আমি রাখবো না, এটা হতে পারে..?
খালিদঃ আমি জানি আপনি এই আবধার ফেলতে পারবেন না। আপনি যে আমার সাথে দুষ্টামি করছেন তা আমি বুঝেছি। তাই আমিও আপনার সাথে শরীক হলাম। (একটু মুচকি হেসে)
রিমাঃ জী.(খালিদের নাক টা আলতো করে চেপে ধরে)
খালিদঃ জানেন.. স্ত্রীর সাথে হাসি তামাশা করা সুন্নত। নবীজী (সঃ) বলেছেন ""কোন স্বামি স্ত্রী যদি একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। তখন আল্লাহ ও তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেন"""।
রিমাঃ সুবহানাল্লাহ. নিন এবার একটু ঘুমান। আমি চুল গুলো টেনে দিচ্ছি।
খালিদ রিমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে আর রিমা খালিদের মাথার চুল গুলো টেনে দেয়।কিছুক্ষন পর খালিদের ঘুম চলে আসলে রিমা খালিদের কপালে একটা চুমু দিয়ে খালিদের মাথাকে তার কোল থেকে সরিয়ে একটি বালিসে রেখে দেয়। তারপর সে বড় ভাবির কাজে সাহায্য করতে পাক ঘরে চলে যায়।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শিক্ষা
★ যানবাহনের সুন্নত, আদব ও আমল সমুহ
১)বিসমিল্লাহ বলে যানবাহনে আরোহণ করা সুন্নত।
২)প্রথমে ডান পা যানবাহনে রাখা সুন্নত। (বিসমিল্লাহ বলতে বলতে পা রাখবে)
৩)ভালোভাবে সীট/আসনন গ্রহন করার পর 'আলহামদুলিল্লাহ্ ' বলা।
৪) গাড়ি/ যানবাহন চলা শুরু হলে দোয়া পড়া সুন্নত।
দোয়া পড়ার শেষে
@তিনবার আলহামদুলিল্লাহ্ বলা।
@তিনবার আল্লাহু আঁকবার বলা।
২)প্রথমে ডান পা যানবাহনে রাখা সুন্নত। (বিসমিল্লাহ বলতে বলতে পা রাখবে)
৩)ভালোভাবে সীট/আসনন গ্রহন করার পর 'আলহামদুলিল্লাহ্ ' বলা।
৪) গাড়ি/ যানবাহন চলা শুরু হলে দোয়া পড়া সুন্নত।
দোয়া পড়ার শেষে
@তিনবার আলহামদুলিল্লাহ্ বলা।
@তিনবার আল্লাহু আঁকবার বলা।
★নিজের থেকেও পিতামাতা কে অবশ্যই গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।
★স্বামি স্ত্রী একে অপরের সাথে হাসি তামাশা করা সুন্নত। তবে খেয়াল করতে হবে তা যেন শরীয়ত পরিপন্থী না হয়।হাসি তামাশা করতে যে যে বিষয় আমাদের খেয়াল করতে হবে...
১)যেন মিথ্যা না হয়।
২)যেন কারো মনে বা ইজ্জিতে আঘাত না লাগে।
৩)যেন অতিরিক্ত না হয়।
৪) যেন সারাক্ষণ এতে লেগে থাকা না হয়। যার ধরুন অন্যান্য ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
১)যেন মিথ্যা না হয়।
২)যেন কারো মনে বা ইজ্জিতে আঘাত না লাগে।
৩)যেন অতিরিক্ত না হয়।
৪) যেন সারাক্ষণ এতে লেগে থাকা না হয়। যার ধরুন অন্যান্য ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
★উকবা ইবনে আমের (রাযি)বলেন, তিনটি খেলা জায়েজ। ১)তীরন্দজী ২)অশ্বরোহন প্রশিক্ষণ ৩) নিজ স্ত্রীর সাথে হাসি তামাশা করা।
★ আগেও বলা হয়েছে স্ত্রীর সাথে নরম ও সৌহার্দপূর্ণ কথা বলা সুন্নত।
★স্বামি স্ত্রী একে অপরের গালে,কপালে যত চুমো খাবে তত নেকি হবে। এবং একে অপরের প্রতি মোহাব্বত বৃদ্ধি পাবে।
tag
0 coment rios:
আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।