রিমা বড় ভাবীর সাথে দুপুরের খাবারের জন্য রান্নার কাজে সাহায্য করছে।খালিদের মাও তাদের সাথে আছে। যদি রিমা আর বড় ভাবি বার বার উনাকে উনার রুমে গিয়ে রেষ্ট নিতে বলে।কিন্তু উনার(খালিদের মা) কথা হলো কাজ করলে উনার কাছে ভালো লাগে।তাই উনি বউদের সাথে থাকেন। খালিদ ঘুম থেকে উঠে গোসল করে এসে বই পড়া আরম্ভ করে।আযান দিলে খালিদ মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অযু করে এসে খালিদ তাইয়াতুল অযু ও সুন্নত নামাজ আদায় করে। তখন রিমা রুমে প্রবেশ করে। খালিদকে নামাজ পড়া অবস্থায় দেখে কিছু না বলে নিজের জামা কাপড় নিয়ে গোসল করতে চলে যায়।(গতকালের কিছু কাজ বাকী থাকায় আজ তাদের রান্না করতে দেরি হয়ে যায়।) খালিদ সুন্নত পড়া শেষ করে মসজিদে চলে যায়। নামাজ পড়ে এসে সে নিজের রুমে এসে বই পড়ে। খালিদের আব্বু ও নামাজ পড়ে চলে আসেন। প্রতিদিন সাধারনত উনারা নামাজ পড়ে ঘরে আসার আগেই বাড়ির মহিলারা নামাজ শেষ করে দুপুরের খাবারের জন্য খাবারের রুমে গিয়ে খালিদের আব্বুর জন্য অপেক্ষা করে।কিন্তু আজ রান্না করতে দেরি হওয়ায় আজ খালিদের আব্বু এসে নিজে অপেক্ষা করে। বড় ভাবী আগে গোসল সেরে নামাজ পড়তে চলে যান। তারপর রিমা গোসল করে নেয়। গোসল করে শেষ করতে খালিদের আব্বু নামাজ পড়ে চলে আসায়, রিমা তার জামাকাপড় পরে ধৌত করবে বলে বালতিতে রেখে খালিদের আব্বু আম্মুর জন্য ভাত বাড়তে চলে যান। যেহেতু এখন বড় ভাবী নামাজ পড়ে তাই রিমা তার শশুর শাশুড়ির সাথে খালিদ কে ও ডাক দেয়।
রিমাঃ আসসালামু আইলাইকুম
খালিদঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম।
রিমাঃ আসুন। খেতে আসুন।
খালিদঃ বড় ভাবী.??
রিমাঃ উনি এখনো নামাজ পড়ছে। আসলে আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে। তাই আমি আব্বু আম্মুকে ভাত বেড়ে দিচ্ছি। আপনিও চলুন একসাথে উনাদের সাথে খেয়ে নিবেন।
খালিদঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আচ্ছি আপনি যান। ভাত বাড়ুন।
তারপর রিমে ভাত বাড়তে খাবারের রুমে চলে যায়। রিমা খালিদের আব্বু আম্মু আর খালিদের জন্য ভাত বাড়ে।
খালিদের মাঃ খালিদ কি আসবে??
রিমাঃ জী মা.. উনি আসতেছেন।
খালিদের মা: তো মা.. তুমিও আমাদের সাথে বসে যাও।
রিমা:আসলে মা.. বড় ভাবী পরে আবার একা হয়ে যাবেন তো তাই আমি চিন্তা করছি উনার সাথে এক সাথে খাবো।
খালিদের মাঃ তা অবশ্য ভালো। ঠিক আছে তুমি বরং বড় বউয়ের সাথেই খাবার খেয়ো।কিন্তু খালিদ এখনো আসছে না কেনো.??
রিমাঃ উনি তো আসবেন বলল।
কিছুক্ষণ পর খালিদ চলে আসে।
খালিদের মাঃ কিরে বাবা.. এত দেরি। সেই কখন বউ মা তোকে আসতে বলছে।
খালিদঃ মা. একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলাম।তাই দেরি হয়ে গেলো।
খালিদের মাঃ ও আচ্ছা. তারাতরি বসো। বউ মা দাও সবাই কে তরকারি দাও।
রিমা সবার প্লেটে প্লেটে তরকারি বেড়ে দেয়। শশুর শাশুড়ি কে দেওয়ার পর খালিদ কে তরকারি বেড়ে দেয়।
খালিদঃ আপনি খাবেন না.?
রিমাঃ বড় ভাবীর সাথে খাবো। না হয় উনি আবার একা হয়ে যাবেন।
খালিদঃ ও আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটি খালিদের বলতে কষ্ট হচ্ছে। যদি এক সাথে খেতে পারতো কত ভালো লাগতো।রিমাও চাচ্ছিল খালিদের সাথে একই প্লেটে খেতে কিন্তু শশুর শাশুড়ি ও বড় ভাবির দিকেও তো তাকাতে হবে। পরে সবার যখন খাওয়া শেষ হলো রিমা সবাইকে গামছা দিলে সবাই হাত মুখ মুছে।
খালিদঃ আব্বু... আম্মু একটা পরামর্শ ছিল।
খালিদের বাবাঃ বলো.
খালিদের :আসলে ৩দিন হয়ে গেছে. উনি এই বাড়িতেই।উনার তো বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে থাকতে পারে। হয়তো মুখ খুলে বলছেন না।
রিমা তো কথাটি শুনে অবাক। কিভাবে যে মনের কথা ধরে ফেলছেন।
খালিদের বাবাঃ আসলেও তাও ঠিক। এখন তুই কি বলিস।
খালিদঃ আমার খেয়াল আমরা না হয় আজ বিকালে যাই। কি বলেন.?? আজ ৩ দিন তো দোকান খুলিনা। একেবারে ঐ বাড়ি থেকে আসলে না হয় দোকানও খুলবো ইনশাআল্লাহ।
খালিদের মাঃ ঠিক আছে তাই ভালো হবে। আপনি কি বলেন (খালিদের বাবা কে উদ্দেশ্য করে)
খালিদের বাবাঃ হুম বাবা ঠিক আছে তাহলে আজ বিকেলেই ঘুরে আয়। কি বলো মা.. তোমার কি খেয়াল.??
রিমাঃ আপনারা যা ভালো মনে করেন।
খালিদঃ ঠিক আছে আমরা বিকালে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
এই বলে খালিদ উঠে তার রুমে চলে যায়। খালিদের বাবা মা ও তাদের রুমে চলে যায়। রিমা প্লেট গুলো গুছিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় তার রেখে আসা জামা কাপড় গুলো ধৌত করতে।
কিন্তু ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে সেখানে বালতি ও নাই জামা কাপড় ও নাই। সে দৌড় দিয়ে গিয়ে দেখে তার জামা কাপড় শুকানোর জন্য দেওয়া হয়েছে যেখানে আলাদা ভাবে শুধু মেয়েরা কাপড় শুকানোর জন্য দেয়।
রিমা চিন্তায় পড়ে গেলো তার জামা কাপড় কে ধৌত করল বড় ভাবি তো নামাজ পড়ছে। হঠাৎ তার খেয়াল আসলো খালিদ তো খাওয়ার আগে ওয়াশ রুমে গিয়েছিল তাহলে কে উনি (খালিদ) না তো..??
রিমা তারাতরি তাদের রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে খালিদ পাঞ্জাবি পড়ছে মনে হয় বাহিরে যাইবে।
রিমাঃ একটা কথা বলার ছিল।
খালিদঃ একটি কেন হাজার টা বলুন। আপনি না বললে কে বলবে।
রিমাঃ আমার জামা কাপড় গুলো কি আপনি ধুয়ে দিছেন.??
খালিদঃ মাথা নেড়ে (হুম)
রিমাঃ কেন এত কষ্ট করতে গেলেন। আমি তো আব্বু আম্মুরর দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে ঐগুলো রেখে ভাত বাড়তে গেলাম।
খালিদঃ হুম, আমি বুঝতে পেরেছি। তাই তো আমি ধুয়ে দিলাম। যাতে আপনার কষ্ট তা একটু কমে যায়।
রিমাঃ তাই বলে আমার জামা কাপড় ধুয়ে দিবেন।
খালিদঃ তাতে কি আমি তো নবীজির সুন্নত জিন্দা করার চেষ্টা করছি।
রিমাঃ মানে..?
খালিদঃ নবীজি (সঃ) তো আম্মাজান আয়েশা (রা) এর কাজে নানা সাহায্য করেছেন। তাই আমি ও আমার বউয়ের কাজে সাহায্য করলাম। এতে একটা সুন্নত জিন্দা হলো না.??
এই কথা শুনার পর রিমার চোখে পানি চলে আসে। রিমা গিয়ে খালিদকে জড়িয়ে ধরে।খালিদ ও রিমা কে জড়িয়ে ধর। কিছুক্ষন জড়িয়ে থাকার পর
রিমাঃ কোথাও বের হচ্ছেন নাকি?
খালিদঃ জী. একটু বাজারে যাচ্ছি। আপনার কিছু লাগবে.??
রিমাঃ না.আপাতত আমার কিছু লাগবে না।
খালিদঃ আচ্ছা আপনাদের বাড়ির জন্য কি কি নিতে পারি।
রিমাঃ আপনার যা ভালো লাগে তা নিয়েন।
খালিদ :আপনার আব্বা আম্মা কে কি খেতে পছন্দ করে।
রিমাঃ আব্বু কমলা খেতে ভালোবাসে। কিন্তু এখন তো কমলা মনে হয় পাবেন না। আপনি বরং মালটা নিয়েন।
খালিদঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি একটু কষ্ট ভাবি আর আম্মুর রুমে থেকে ঘুরে আসুন। উনাদের কারো কিছু লাগবে কিনা।
রিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর রিমা সালাম দিয়ে তার শশুর শাশুড়ির ঘরে প্রবেশ করে কিচ্ছু লাগবে কিনা।তারা কিচ্ছু লাগবে না বলে। তারপর রিমা বড়ভাবির রুমে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে।
রিমাঃ আমরা তো আজ বিকালে আমাদের বাসায় যাবো। তাই আপনার ভাই (দেবর) এখন একটু বের হচ্ছে। আপনার কিছু লাগবে কিনা।
বড়ভাবিঃ না। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার আপাতত কিচ্ছু লাগবে না।
রিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি ভাত খেতে আসুন, আমিও আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি উনাকে বলে আসছি যে আপনার কিছু লাগবে না। তারপর একসাথে দুইজনে মিলে খাবো।ইনশাআল্লাহ। আপনি গিয়ে খাবারের রুমে গিয়ে বসুন। আমি আসতেছি।
.
রিমাঃ আম্মু আব্বু এবং বড় ভাবি কারো কিছু লাগবে না বলছে। তবে আম্মুর পান মনে হয় শেষ হয়ে আসছে।আসার সময় নিয়ে আসিয়েন।যদিও আম্মু বলে নাই।
খালিদঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে যাচ্ছি। আপনি তারাতরি বড় ভাবিকে নিয়ে ভাত খেয়ে নিন।
এই বলে খালিদ রিমা কপালে একটা চুমো দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
রিমাঃ ফি আমানিল্লাহ
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শিক্ষা
১) স্ত্রীর কাজে সাহায্য করা সুন্নত। সয়ং নবীজী (সঃ) আম্মাজান আয়েশা (রঃ)কাজে সাহায্য করেছেন। যখনি সময় ও সুযোগ থাকে তখনি পরিবারের কাজে সাহায্য করা উচিত। এতে একে অপরের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি হবে। কাপড় ধৌত করা, তরকারি কেটে দেওয়া, মশারী টাংগানো ইত্যাদি।অনেক সময় আমাদের মা বোনেরা সারাদিন কাজ করার পর দুপুরে যখন গোসল করতে যায় তখন আপনি খেতে চলে আসছেন দেখে আপনার স্ত্রী আপনার গোসল করে আর কাপড় ধৌত না করেই আপনার জন্য ভাত বাড়তে চলে আসে। আপনি বার্থরুমে মুখ ধৌত করতে এসে আপনার স্ত্রীর জামাকাপড় পড়ে থাকতে দেখেও আপনি না দেখার ভান করে চলে আসেন। অথচ আপনি চাইলেই জামা কাপড় গুলো ধৌত করে দিতে পারেন।★ আপনি রাতে খাওয়ার পর ঠিকই নিজের রুমে চলে আসলেন। অথচ আপনার স্ত্রী খাওয়ার পর অবশিষ্ট খাবার গুলো হয়তো গরম করবে না হয় ফ্রিজে রেখে দিবে।তারপর প্লেট গুলো ধৌত করবে। তারপর রুমে আসবে। আপনি কিন্তু এই মাঝেই ইচ্ছা করলেই মশারি টা টাংগিয়ে নিতে পারেন।খাট টা গুছিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু আপনি সেটা করলেন না, অযথা মোবাইল বা অন্য কাজে সময় পার করে দিলেন।এভাবে সকল কাজে যদি আপনি ইচ্ছা করেন আপনি আপনার ফ্যামিলির অনেক কাজ করে দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের পুরুষদের চিন্তা হলো এগুলো তো স্ত্রীর কাজ। আমি কেন করবো। এই ধরনের চিন্তা চেতনা থেকে আমাদের বের হতে হবে।
২)মহিলাদের জামা কাপড় ও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। অনেক ক্ষেত্রেই মহিলাদের জামা কাপড় দেখেই পুরুষরা আকৃষ্ট হতে পারে। তাই যেখানে সচরাচর পুরুষরা চলাফেরা করে সেখানে মহিলাদের কাপড় শুকাতে না দেওয়াই উত্তম।
৩)সব সময় মা বাবা সহ পরিবারের সকল সদস্যের খোজ খবর নেওয়া জরুরী। কারো কিছু লাগবে কিনা। লাগলে এনে দেওয়া জরুরী।
৪)আপনার যেমন জন্মদাতা পিতা মাতা আছে আপনার স্ত্রীর ও পিতা মাতা আছে। আপনার স্ত্রীর ও পিতা মাতা দেখার জন্য মনে চাইতে পারে। তাই মাঝে মাঝে আপনি সহ উনার বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া উচিত।
শরীয়ত পরিপন্থী কাজ
★
আমাদের দেশে স্বামি যদি বিদেশ বা এলাকার বাহিরে থাকে তখন দেবরের সাথে স্ত্রীকে এই বাড়ি সেই পাঠানো হয়। এটা পুরাপুরি শরীয়ত পরিপন্থী কাজ। যা মারাত্মক গুনাহ। এই ক্ষেত্রে আসা যাওয়ার জন্য স্ত্রীর ভাই বা পিতা সাথে থাকবে। দেবর নয়।
আমাদের দেশে স্বামি যদি বিদেশ বা এলাকার বাহিরে থাকে তখন দেবরের সাথে স্ত্রীকে এই বাড়ি সেই পাঠানো হয়। এটা পুরাপুরি শরীয়ত পরিপন্থী কাজ। যা মারাত্মক গুনাহ। এই ক্ষেত্রে আসা যাওয়ার জন্য স্ত্রীর ভাই বা পিতা সাথে থাকবে। দেবর নয়।
(দেরীতে পোষ্ট দেওয়াতে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত)
tag
0 coment rios:
আপনার একটি গুরুত্বপূন্য কমেন্ট লেখককে অনুপ্রানিত করে । অনুগ্রহ করে আপনার অনুভুতি আমাদেরকে জানান । আশা করি আমরা সহযোগিতা করতে পারবো ।